reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

সাধারণত বাদুড়ের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। শীত মৌসুমে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ শুরু করেন গাছিরা। বাদুড় এই খেজুরের রস যখন খায়, তখন রসে তার লালা ঝরে পড়ে। তখনই নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত ২০ বছরে দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষদের ৭১ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে। নিপাহ ভাইরাসের কোনো টিকা নেই। কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও নেই। তাই চিকিৎসকদের মতে, প্রতিকারের চেয়ে নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধই শ্রেয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাদুড় বা পাখির আধা খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। রস যদি খেতেই হয় তাহলে নিয়ম মেনে খেতে হবে। কখনোই কাঁচা রস না খেয়ে তা ফুটিয়ে গরম করে খেতে হবে। বলা সংগত, নিপাহ ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে হলে মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

গত দুই দশকে দেশের ৩২টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এ রোগ বেশি সংক্রমণ ঘটেছে ফরিদপুরে। যেসব এলাকার মানুষ নিপাহ ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় সেসব এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করতে হবে। শীত মৌসুম এলেই নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে। কেননা এই মৌসুমেই নিপাহ ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় মালয়েশিয়ার সুঙ্গাই নিপাহ নামক গ্রামে। ওই গ্রামের নামেই ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়। মূলত ফলাহারি বাদুড় এই ভাইরাসের প্রধান বাহক। তবে ফলাহারি বাদুড় নিজে ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। সম্প্রতি দেশে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের লক্ষণ প্রকাশ পেতে রস পানের পর প্রায় ১০ দিনের মতো সময় লাগে। আর মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের লক্ষণগুলো ৬ থেকে ১১ দিন পরে দেখা যায়। নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের ধরন কিছুটা অন্যান্য ভাইরাসের মতো হলেও এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশের মৃত্যু হয়েছে। নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা না থাকায় সতর্কতা ও সচেতনতা এ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায়। প্রাথমিকভাবে সংক্রমণের কোনো লক্ষণ নাও দেখা দিতে পারে। তবে এক পর্যায়ে জ্বর, কাশি, মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বিভ্রান্তি ইত্যাদি হয়ে থাকে। এক বা দুই দিনের মধ্যে রোগী অচেতন হয়ে পড়তে পারেন। রোগ সেরে যাওয়ার পর মস্তিষ্কে দেখা দিতে পারে সংক্রমণ ও খিঁচুনির মতো জটিলতা।

ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এরই মধ্যে নানা প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ঢাকার মহাখালীর কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ১০টি আইসিইউ প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি জ্বর-কাশি-খিঁচুনির উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। শীতকাল এলেই আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে খেজুরের রস পানের ধুম পড়ে যায়। শহর থেকে মানুষজন গ্রামের আত্মীয়ের বাড়িতে ছুটে যান শীতের আমেজ উপভোগের জন্য। রস পানের ক্ষেত্রে এই সময়ে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে- ঝুঁঁকি এড়াতে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close