reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

জলাশয় রক্ষায় চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের জলাভূমির মধ্যে রয়েছে প্লাবনভূমি, নিচু জলা, বিল, হাওর, বাঁওড়, জলমগ্ন এলাকা, উন্মুক্ত জলাশয়, নদীতীরের কাদাময় জলা, জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত নিচু সমতলভূমি এবং লবণাক্ত জলাধার। সাধারণত যেখানেই পানি, সেখানেই মাছের আবাস। তাই মৎস্য খাতে জলাভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর মোট আহরিত মাছের দুই-তৃতীয়াংশ আসে জলাভূমি থেকে। তাছাড়া পানির রাসায়নিক উপাদান নিয়ন্ত্রণ ও অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান শোষণ করে পানির গুণাগুণ বৃদ্ধিতে সহায়তার মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ দূষিত পানি বিশুদ্ধকরণেও ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বিপন্ন ও বিলুপ্তপ্রায় মৎস্য প্রজাতি সংরক্ষণেও সংরক্ষিত জলাভূমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রতি বছরের মতো এবারও ২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিশ্বজুড়ে জলাভূমি দিবস পালন করা হয়েছে। ১০০টির বেশি দেশের পরিবেশ সচেতন নাগরিকদের নিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী জলাভূমি দিবস পালন করা হয় ১৯৯৭ সালে। শুরু থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এ পর্যন্ত ১৭১টি দেশ জলাভূমি বিষয়ে চুক্তি অনুমোদন করেছে। বাংলাদেশ ১৯৯২ সালে এ চুক্তিতে সই করেছিল। ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। সম্মেলনে জলাভূমির আন্তর্জাতিক উপযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়। এছাড়া জলাভূমি বিষয়ে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ১৯৭৫ সাল থেকে ওই চুক্তি কার্যকর করা হয়। নদী-নালা, বিল, হাওর, বাঁওড়ের মতো বহু জলাভূমি রয়েছে বাংলাদেশে। দেশের ৭ থেকে ৮ লাখ হেক্টর ভূমি কোনো না কোনোভাবে জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এসব ভরাটের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও নগরের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি শহরের বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশে প্রতি বছর ৪২ হাজার একর কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে পাঁচ হাজার ৭৫৭ একর জলাভূমি ভরাট হয়েছে। আমরা জানি, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। তা সত্ত্বেও আমরা জলাশয় ভরাট বা দখল হতে দেখি। ডিটেইলড এরিয়া প্লান-ড্যাপের মাস্টারপ্ল্যান এবং আইন ভেঙে জলাশয় ভরাট হচ্ছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হচ্ছে না। যার যেটা মন চায়, সে সেটা করছে।

ড্যাপের আওতায় চিহ্নিত জলাশয়গুলো যারা ভরাট করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। ড্যাপের পরিকল্পনায় জলাভূমির বিষয় সুস্পষ্ট করা আছে। আইনগুলোও সুস্পষ্ট। কোনটি জলাধার এবং তা কীভাবে রক্ষা করা যাবে- সবকিছু বলা আছে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আইন কিংবা পরিকল্পনা থাকলেই হবে না, প্রয়োগ থাকতে হবে। আমরা চাই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হোক এবং পরিবেশের স্বার্থে রক্ষা পাক জলাভূমি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close