reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বায়ুদূষণ রোধে বিশেষ অভিযান সফল হোক

বায়ু বেঁচে থাকার জন্য এক অপরিহার্য উপাদান। তবে সেই বায়ু বিশুদ্ধ না হয়ে যদি দূষিত হয় তাহলে সেটা মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করলে মানুষের তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয় না, কিন্তু মানুষ দ্রুতই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। বাতাসে যেসব ক্ষতিকর ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে তা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এসব ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়। আর সাম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। এতে শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের সংক্রমণ বাড়ছে। এক্ষেত্রে দূষণ রোধে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি বায়ূদুষণ রোধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নসহ বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বলা সংগত, মাত্রাতিরিক্ত ইটভাটা, যানবাহন, নির্মাণকাজ ও কল-কারখানার ধোঁয়ার কারণে ঢাকা মহানগরীর প্রায় দেড় কোটি মানুষ এক অবিশ্বাস্য দূষণের মধ্যে বাস করছে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার এক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে দূষণের মাত্রা গত ১০ বছরে ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এর প্রভাবে প্রতি বছর শত শত শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বায়ুদূষণের কারণে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ওঠে এসেছে ঢাকার নাম। গত মঙ্গলকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে ঢাকার স্কোর ছিল ২৯১। এবার নগরবাসীর জন্য সুখবর হচ্ছে, পরিবেশ অধিদপ্তরে কর্মরত তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে বুধবার থেকে বায়ুদূষণকারী প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের বিরুদ্ধে নগরীতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেছে। অভিযানের সংখ্যা ও পরিধি বাড়াতে জরুরিভিত্তিতে আরো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য পাঠানোর জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এডিপি পর্যালোচনা সভায় পরিবেশমন্ত্রী বলেন, দেশের বায়ুদূষণের এ পরিস্থিতি কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়। তাই বায়ুদূষণরোধে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর আইনানুগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। মন্ত্রী জানান, বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনে তিনি নিজেও অভিযানে অংশগ্রহণ করবেন। আমরা মনে করি, মহানগরীর স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি দ্রুত বায়ুদূষণের উৎসগুলো বন্ধ করতে হবে। বায়ুদূষণে জড়িত দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। সর্বোপরি বায়ুদূষণের সব উৎস বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

ঢাকায় বায়ুদূষণ কমাতে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি মহামান্য হাইকোর্ট ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে কয়েকটি স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ রয়েছে। এছাড়া মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সবার আগে সবাইকে একযোগে সমন্বিত, টেকসই, বিজ্ঞানভিত্তিক ও অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close