
ঢাকার ফুসফুস সজীব থাকুক

রমনা পার্ক ঢাকার ফুসফুস হিসেবেই পরিচিত। নাগরিক জীবনে কর্মব্যস্ত মানুষের দম ফেলার এক টুকরো নিরাপদ জায়গা। যারা স্বাস্থ্য সচেতন, নিয়মিত হাঁটেন বা ব্যায়াম করেন তাদের অনেকের জন্য পার্কটি ভরসাস্থল। প্রাণ প্রাচুর্যময়, বৃক্ষশোভন ঢাকা একসময় ছিল বসবাসের জন্য দারুণ আকর্ষণীয়। কিন্তু জনসংখ্যার বিপুল বিস্তারে এখন প্রায় স্থবির এই শহর। তবে রমনা উদ্যান আবার ভরে উঠেছে ফুলে-ফুলে, জল-সবুজে। ফিরে এসেছে সতেজ বাতাস ও মনোরম পরিবেশ। সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে রমনাকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। যেন ইটপাথরের ঢাকার মধ্যে এক টুকরো জল-সবুজের আবাহন। আর এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে। তার নির্দেশে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নতুন রূপে সাজিয়ে তুলেছে পুরোনো বৃক্ষরাজির এই উদ্যানকে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে রমনা বটমূলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রমনা উদ্যানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রমনা লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পসহ ১১ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়েই আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে রমনা পার্ক। এখন মৎস্য ভবনের সামনে রমনা পার্কে ৪ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সিরামিক ইটে তৈরি ওয়াকওয়ে। আর বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে বাহারি ফুলগাছ। আরেকটু ভেতরে গেলে সুবিস্তীর্ণ লেক। লেকের দুই পাশে হাঁটার জন্য তৈরি করা হয়েছে নতুন রাস্তা, যা রমনায় এই প্রথম। খনন করায় লেক পেয়েছে যৌবন, পানিতে ফিরেছে স্বচ্ছতা। বেশি নজর কাড়ে লেকের দুই পাড়ে তৈরি ডেক, যেখানে কাঠের পাটাতনে করা হয়েছে হাঁটার ব্যবস্থা। সিরামিক ইট দিয়ে পার্কের সব ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পার্কজুড়ে ২২০টি ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। এছাড়া আধুনিক ৯০০টি ল্যাম্পপোস্ট বসানোসহ নানা ধরনের আলোকসজ্জা করা হচ্ছে। লেকের পানিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক রাখতে বসানো হচ্ছে মেশিন। লেকের ময়লা পরিষ্কারের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। রমনা পার্কে পুরোনো রাস্তাগুলো সংস্কার, একটি কালভার্ট, পার্কের ভেতরে দুটি এলইডি টিভি স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে। মৎস্য ভবনের বিপরীত দিকের গেট দিয়ে পার্কে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটি এলইডি টিভি স্ক্রিন। হেয়ার রোডের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার পার্শ্ববর্তী ভিআইপি গেট হয়ে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে আরেকটি এলইডি টিভি স্ক্রিন। রমনা পার্কের ভেতরে ১ হাজার ২০০ লাইট এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। রমনা চাইনিজ রেস্তোরাঁ ভেঙে সংস্কারের পর নির্মাণ করা হয়েছে কফি কর্নার। শিশু কর্নারে নতুন সরঞ্জাম স্থাপন করা হয়েছে।
মোট কথা রমনা পার্ককে ঢেলে সাজানো হয়েছে। আর এর মাধ্যমে উদ্যানে যেন নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ঢাকার বুক থেকে যেখানে সবুজ গাছপালা হারিয়ে যাচ্ছে; ইট-পাথর আর কংক্রিটের দেয়াল উঠে যাচ্ছে, সেখানে রমনা পার্কের মতো এক খণ্ড সবুজ উদ্যানকে যেভাবেই হোক বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের। ফুসফুস না থাকলে যেমন মানুষ দম নিতে পারে না; বাঁচতে পারে না, তেমনই ঢাকাকে সজীব-প্রাণবন্ত রাখতে রমনা পার্ক গুরুত্বপূর্ণ। আর এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণে নগরবাসীকেও আন্তরিক হতে হবে। কারণ এই রমনাই আমাদের ফুসফুস।
"