রাশেদ নাইব

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২৩

ধর্মচিন্তা

পর্দার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

পর্দা শব্দটি আরবি হিজাব শব্দের বাংলা ও উর্দু তরজমা। যার অর্থ আবরণ অর্থাৎ যা দিয়ে কোনো কিছু ঢেকে রাখা যায় কিংবা যার সাহায্যে কোনো কিছুকে দৃষ্টির আড়াল করা হয়। ইসলামি শরিয়তে পর্দার অর্থ হলো সতর। পর্দা আল্লাহতায়ালার এক বিশেষ নির্দেশ। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা করা ফরজ। এর সুফল ইহকাল ও পরকালে পাওয়া যাবে। পর্দার কারণে ইহকালে হিফাজত ও নিরাপত্তা এবং সামাজিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা লাভ হবে। আর পরকালে এর প্রতিদান মহান আল্লাহর নিয়ামত ও জান্নাত পাওয়া যাবে।

পক্ষান্তরে বে-পর্দার জন্য ইহকালেও বে-ইজ্জতের কুফল ও পরকালেও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মহিলারা যেন তাদের পায়জামা পায়ের গোছা হতে এক বিঘত পরিমাণ নিচে নামিয়ে দেয়। এ কথা শুনে হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, এ অবস্থায় তো তাদের পায়ের টাকনু হতে নিচের অংশ খোলা থাকবে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) তখন বললেন, তবে এক হাত নিচে নামিয়ে দিবে। (আবু দাউদ শরিফ)

অনেকে বলে মনের পর্দা বড় পর্দা বাহ্যিক কোনো পর্দার প্রয়োজন নেই, এরূপ উক্তি সম্পূর্ণ কোরআন হাদিসের বিরোধী, কুফরি বা ঈমান বিধ্বংসী কথা এমন কথা বললে বা বিশ্বাস করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

পর্দার হুকুম : হে নবী! মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে চলে। এটাই তাদের জন্য পবিত্রতম পন্থা। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে,আল্লাহ তা জানেন।

তেমনিভাবে মুমিন নারীদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনমিত রাখে এবং যৌন পবিত্রতা রক্ষা করে। তারা যেন স্বীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, শুধু ওই সৌন্দর্য ব্যতীত, যা সাধারণভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে এবং তারা যেন স্বীয় বুকের ওপরে আবরণ বা চাদর টেনে দেয়। আর তারা যেন সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এসব লোক ব্যতীত, যথা- স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, তৎপুত্র, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভাগনে, আপন স্ত্রীলোকগণ, স্বীয় ক্রীতদাস, নারীর প্রতি স্পৃহাহীন এবং ওইসব বালক যারা নারীর গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়নি। তারা যেন পথ চলার সময় এমন পদধ্বনি না করে, যাতে তাদের অপ্রকাশিত সৌন্দর্য পদধ্বনিতে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। (সূরা নূর : ৩০-৩১)

হে নবীর বিবিগণ! তোমরা তো সাধারণ নারীদের মতো নও। যদি পরহেজগারী অবলম্বন করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে বিনম্র সুরে কথা বলো না। কারণ এর ফলে যাদের অন্তরে খারাপ বাসনা আছে, তারা তোমাদের ওপরে এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে বসবে। সহজ-সরলভাবে কথা বলো। আপন ঘর থেকে অতীত জাহেলিয়াতের ন্যায় রূপ যৌবন প্রদর্শনী করে বেড়িও না। (সুরা আহজাব : ৫৯)

হে নবী! আপনার বিবি, কন্যা এবং মুমিন নারীদের বলে দিন, তারা যেন তাদের শরীর ও মুখমণ্ডল হিজাব দ্বারা আবৃত রাখে।

পর্দা ফরজ হওয়ার প্রমাণ : মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন- তোমরা গৃহের অভ্যন্তরে অবস্থান করবে। জাহেলি যুগের নারীদের অনুরূপ নিজেদের প্রদর্শন করবে না। (সুরা আহজাব : ৩৩)

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এরশাদ করেন, সাবধান! কোনো পর পুরুষ যেন কোনো পর নরীর সঙ্গে নির্জনে অবস্থান না করে। কেননা, যখনই তারা নির্জনে একত্রিত হয় শয়তান তাদের তৃতীয় জন হয় এবং কুকর্মে লিপ্ত করানোর প্রচেষ্টায় তাদের পিছু লেগে যায়। (তিরমিজি শরিফ)

অনেক মেয়েদের দেখা যায় বিবাহের আগে যদিও তারা জামা পায়জামা পরে তাদের শরীর ঢেকে রাখে, পর্দার চেষ্টা করে কিন্তু বিবাহের পর পূর্বের ন্যায় ততটুকু সতর্ক থাকে না। পরিবারের লোকদের সামনে শরীরের কিছু অংশ প্রদর্শন করে চলাফেরা করে। সন্তান হলে তো কোনো কথাই নেই, পরিবারের অন্য সদস্যদের সামনেই স্তন উন্মুক্ত করে শিশুকে দুগ্ধ পান করান (বিশেষত মহিলাদের সামনে)। বিবাহের পূর্বে বা পরে উভয় অবস্থায় মেয়েদের পর্দার হুকুম সমান। তাই বিবাহের পূর্বে মাহরাম পুরুষের সামনে যেসব অঙ্গ-প্রতঙ্গ প্রকাশ করা হারাম, বিবাহের পরও তা প্রকাশ করা হারাম। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, পর্দার বিধান তোমাদের অন্তঃকরণগুলো পবিত্র থাকার উত্তম উপায়। (সুরা আহজাব : ৫৩)

তবে পর্দার উদ্দেশ্য কখনো মহিলাদের শুধু ঘরের কোনে আবদ্ধ করে রাখা নয়। বরং হজরত মুহাম্মদ (সা.) মহিলাদের আপন সম্ভ্রম রক্ষা করে জরুরি শিক্ষা দীক্ষা, চিকিৎসাকেন্দ্র এবং হজব্রত পালনের উদ্দেশে কিংবা সাংসারিক জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনে পর্দার গণ্ডির ভেতরে চাকরি ও ব্যবসার অনুমতি রয়েছে। পর্দাহীনতায় বিশ্ব মানবতার সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো- মানবের সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ উত্তম চরিত্র এবং আদর্শ ধ্বংস হয়ে যায়। লজ্জাহীন মানুষ পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। তারা যেকোনো অপরাধ করতে দ্বিধা বোধ করে না। রাসুল (সা.) বলেন, যখন তোমার লজ্জা থাকবে না, তখন তুমি যে অন্যায় ইচ্ছা,তা করতে পারবে। (বুখারি শরিফ)

পরিশেষে বলা যায়, পর্দার বিধান অবশ্যই মেনে চলতে হবে এবং যে ব্যক্তি পুরুষ কিংবা মহিলা যদি সম্পূর্ণভাবে এর বিধার মান্য করে চলেন তাহলে অবশ্যই তারা দুনিয়াবি শান্তি ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হবে। আল্লাহতালা আমাদের পর্দার বিধান মেনে চলার তওফিক দান করুন।

লেখক : কবি ও কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close