reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৩

নিদর্শনগুলোর যথাযথ সংরক্ষণ আমাদের কাম্য

প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন একটি জাতির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক। যার মাধ্যমে অতীতে মানুষের জীবনাচার সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। তা না হলে মানুষের সাংস্কৃতিক বিকাশের অনেক ইতিহাস আমাদের অজানা থেকে যেত। প্রত্নতত্ত্বকে বলা হয় মানুষের অতীত কর্মকাণ্ডের অধ্যয়ন। প্রাগৈতিহাসিক সময়ের বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতি সম্পর্কে প্রত্নতত্ত্ব আমাদের সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়। প্রাচীনকালের মানুষের নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদি, স্থাপত্য, জীবনযাপনের কৃৎকৌশল, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উপকরণ ও জৈবিক উপাদানগুলো উপস্থাপন করে। সভ্যতা ও সংস্কৃতির নানা দিক সম্পর্কে জানতে প্রত্নতত্ত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

মানুষের প্রাগৈতিহাসিক সংস্কৃতি ও সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে জ্ঞানের যে শাখা সৃষ্টি হয়েছে তাকেই আমরা বলি প্রত্নতত্ত্ব। প্রত্নতাত্ত্বিকরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে শত শত বা হাজার হাজার বছর আগের প্রাণী ও উদ্ভিদের জীবাশ্ম ও মানুষের নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, যুদ্ধাস্ত্র, কৃষি ও সেচ যন্ত্রপাতি মাটি খুঁড়ে বের করেন। প্রাচীন সভ্যতার সময় নির্ধারণ, সাংস্কৃতিক ও প্রতিবেশিক পরিস্থিতি যাচাইয়ে এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের গুরুত্ব অনেক বেশি। সেই নিরিখে বলা যায়, যেকোনো দেশের প্রত্নাবশেষ সে দেশের সামাজিক ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১০ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত জাদুঘরটি বাঙালির হাজার বছরের স্থাপত্য শিল্পের সমৃদ্ধ সম্ভার। কিন্তু স্থানের অভাবে নষ্ট হচ্ছে এবং খোয়া যাচ্ছে এই দুর্লভ প্রত্নসম্ভার। জাদুঘরের গ্যালারিতে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। ফলে বাইরের গ্রন্থাগার ভবনের নিচে এবং জাদুঘরের মাঝখানের খোলা জায়গার গ্যালারিতে পড়ে রয়েছে শতাধিক দুর্লভ প্রত্নসম্পদ। গত রবিবার প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এই চিত্র। জাদুঘরটিতে প্রায় ১৭ হাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। তবে মাত্র ১ হাজার ২০০টি নিদর্শন গ্যালারিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা রয়েছে। আর বাকি ১৬ হাজার নিদর্শনের স্থান হয়েছে তালাবন্দি অবস্থায় গুদাম ঘরে। এর মধ্যে নবম শতকের দুর্গা সিংহ বাহিনী, সূর্য, দশম শতকের বিষ্ণু (ত্রিবিক্রম), উপবিষ্ট গণেশ, এগারো শতকের চৌকাঠের অংশ বিশেষ, বারো শতকের উমা-মহেশ্বও উল্লেখযোগ্য। জাদুঘরের আঙিনার ওপরে ছাদ না থাকায় পুরাকীর্তিগুলো খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একটি দেশের জন্য এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যে অমূল্য সম্পদ তা বোধ করি নতুন করে বলার কিছু নেই।

বলাবাহুল্য, অযত্ন-অবহেলা আর অব্যবস্থাপনার কারণে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে থাকা এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এর ফলে যেমন তথ্য বঞ্চিত হচ্ছেন গবেষকরা, তেমনি ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই বিশাল সম্ভার অজানাই থেকে যাচ্ছে তরুণ প্রজন্মের কাছে। বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের এই দুরবস্থা কোনোভাইে মেনে নেওয়া যায় না। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিগগিরই গুরুত্বপূর্ণ এই প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালার যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। পাশাপাশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর যাতে কোনো ক্ষতিসাধন না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close