এসডিজি অর্জনে সবার সম্পৃক্ততা প্রয়োজন
দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় এবং সব জায়গার মানুষ যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে, তা নিশ্চিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করা হয়। জাতিসংঘ ১৫ বছর মেয়াদি এসডিজি গ্রহণ করে ২০১৫ সালে। এর উদ্দেশ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা। সেজন্য ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া আরো ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জাতিসংঘ এর আগে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) গ্রহণ করেছিল। এরপরই আসে এসডিজি। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর মধ্যে দারিদ্র্যতা দূর করা, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সুস্বাস্থ্য, উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত ও লিঙ্গবৈষম্য প্রতিরোধ অন্যতম। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা এরই মধ্যে সাত বছর অতিক্রম করেছে, যার বাস্তবায়ন গতি কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য হ্রাসের পরিবর্তে এখন তা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বলা সংগত, এই অবস্থায় অর্থনীতি স্থিতিশীল ও টেকসই হওয়া দূরের কথা, অনেক দেশ আর্থিক সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে নানা অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও এমডিজি অর্জনে সাফল্য এবং দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতির প্রবণতা নির্ধারিত সময়ে এসডিজি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যেখানে সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও বেসরকারি খাতের গুরুত্বও কম নয়। সরকার একা এসডিজি অর্জন করতে সক্ষম হবে না। টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করার দায়িত্ব করপোরেশন, সুশীল সমাজ এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিকসহ সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার। এসডিজি একটি বৈশি^ক উন্নয়ন ধারণা হলেও বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এটি অপরিহার্য। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এসডিজি অর্জনে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এসডিজি অর্জনে সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায় বলে জানিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, এসডিজি অর্জনে সবার সম্পৃক্ততা প্রয়োজন। প্রত্যেকের সক্রিয় অংশগ্রহণে এটি অর্জন করা সম্ভব। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘জনশুনানি, জাতীয় উন্নয়ন এবং স্থানীয় বাস্তবতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় গত শনিবার মন্ত্রী আরো বলেন, দরিদ্রতা, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে স্থায়ী উন্নয়ন করতে আমাদের দীর্ঘ মেয়াদে ধাপে ধাপে এগোতে হবে। প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি হাসপাতাল গড়ে তোলেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কমিউনিটি হাসপাতাল কাজ করছে।
মন্ত্রীর কথার সূত্র ধরেই বলা যায়, আমাদের পানি, বিদ্যুৎ, খাদ্যশস্য- প্রতিটি ক্ষেত্রেই সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। কারণ আমরা জানি, করোনা মহামারির প্রভাব অনেকটা কমে গেলেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনো চলছে। এ কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে মানুষের অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু সেটা যেন আমাদের দেশে না হয়, সে জন্যই সচেতন হতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই এসডিজি অর্জনের পথে আমর আরো এগিয়ে যাব। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"