reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর, ২০২২

ফিরে আসুক পোশাক শিল্পের জৌলুস

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের সব শিল্প খাত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই দুর্যোগে তৈরি পোশাক খাত যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এর আগে আর কখনো হয়নি। অবশ্য মহামারির আগে থেকেই পোশাকশিল্প কিছুটা চ্যালেঞ্জের মধ্যে ছিল, পরে আরো খারাপ হয়। করোনার প্রাদুর্ভাব কমতে থাকলে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা পোশাক বিক্রয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে থাকায় চাহিদা কিছুটা বাড়ে। তবে করোনার সময়ে বাতিল করা ৩১৮ কোটি ডলার মূল্যের অর্ডারের প্রায় ৯০ শতাংশ পুনর্বহালের মাধ্যমে রপ্তানিতে আপাতদৃষ্টে একটি গতি সঞ্চার হয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে ধরা হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোকে। মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এ দেশগুলোয় অনৈতিক মন্দাভাব দেখা দেয়। ওইসব দেশে দেখা দেয় মূল্যস্ফীতি। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও বেড়ে যায়। এতে চরম অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয় ওই দেশগুলোয়; যার সরাসরি প্রভাব পড়ে আমাদের দেশের পোশাকশিল্পে।

তবে এত কিছুর পরও আশা জাগানিয়া খবর হলো- মহামারি পরবর্তী ধকল এবং বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ৭০ কোটি (৭০৬ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন) ডলারের। এই বাজারটিতে ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং মেক্সিকোর চেয়ে বেশি পোশাক রপ্তানি করে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডের অর্ডার বাড়ছে, যা দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকদেরও স্বস্তি দিচ্ছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ইউএস ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করা হয়েছে, যা ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ২৫৪ কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আর গত ৯ মাসে ৭৩ কোটি ৮৭ লাখ ইউএস ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫২ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার ইউএস ডলার। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় পোশাক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২১ কোটি ৮৫ লাখ ৪০ হাজার ডলার, যা শতাংশের হিসাবে ৪২ দশমিক ১ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ডেনিম সেক্টরে ভালো অবস্থানে আছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এখন অন্যতম প্রধান বাজার। কিন্তু চলমান বৈশি^ক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অক্টোবর থেকে আমাদের ডেনিম রপ্তানি আয় কমেছে। এ কারণে চলতি বছর শেষ হওয়ার পর প্রবৃদ্ধির হার কমে যাবে। শুধু রপ্তানি প্রবৃদ্ধির মাপকাঠিতে এ শিল্পের সংকট পরিমাপ করা ঠিক হবে না।

মনে রাখতে হবে, করোনার ফলে শুধু রপ্তানি বিপর্যস্ত হয়েছে, তা নয়; কারখানাগুলো যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছে, সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে; এই দিকটাতেও কীভাবে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। আমরা আশা করি, কার্যাদেশ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে, আমাদের পোশাকশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে। শুধু ঘুরে দাঁড়াবেই না, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায়ও থাকবে শীর্ষে। এতে দেশের অর্থনীতি যেমন গতিশীল হবে, তেমনি ফিরে আসবে পোশাকশিল্পের জৌলুস। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close