reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ ডিসেম্বর, ২০২২

অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হোক

পদ্মা নদীর এপাড়-ওপাড় একটি সেতুর মাধ্যমে যুক্ত করতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি বাংলাদেশকে। সেতুর কাজ শুরু হওয়ার সময় প্রথমেই দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছিল; অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। তখন কাজ থামিয়ে দিয়ে বসে থাকলে এখনো হয়তো পদ্মা সেতুর মুখ দেখা হতো না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিলেন ‘নিজের টাকায় নিজেদের সেতু হবে’ হলোও তাই। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা করার মতো একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া তার পক্ষেই সম্ভব। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ, যাদের নিয়মিত পদ্মা নদী পার হতে হয়, তাদের জন্য পদ্মার ওপর শুধু একটি সেতু নয়, এটি তাদের কাছে দুর্বিষহ যন্ত্রণা লাঘবের নাম, তাদের চিকিৎসাসেবার নিশ্চয়তার নাম, তাদের জন্য একটি আবেগের নাম।

যে সেতুর সঙ্গে দেশের ১৬ কোটি মানুষের আবেগ জড়িত সেটার কোনো ক্ষতিসাধন মেনে নেওয়া যায় না। অথচ সংবাদমাধ্যমে হতাশাজনক একটি খবর চোখে পড়ল। পদ্মা সেতুর ধারে-কাছে শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট অবাধে বালু উত্তোলন করছে। আর এ বালু বহন করে নিতে পদ্মার বুকে ঢল নেমেছে বালুবাহী বাল্কহেডের। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পদ্মা নদীতে কোনো বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি। কিন্তু প্রশাসনের এ কথার নিয়মনীতি উপেক্ষা করে ওই প্রভাবশালী বালুখেকো সিন্ডিকেট প্রতিদিন পদ্মার তলদেশের লাখ লাখ ঘনফুট বালু লুটে নিচ্ছে। এর ফলে বিপুল অঙ্কের টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আর হুমকিতে ফেলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে। প্রতিদিনের সংবাদের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতুর ২৫ থেকে ২৮ নাম্বার পিলারের কাছে শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টেস্ট পাইল ড্রাইভের যন্ত্রাংশ নদীর তলদেশ থেকে ওঠানোর জন্য ১৬টি ড্রেজারকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হলেও অনুমতি ছাড়া প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের শতাধিক ড্রেজার বসিয়ে পদ্মার তলদেশ থেকে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। বাল্কহেডের মাধ্যমে এই বালু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বাল্কহেড ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন বা নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। পদ্মা নদীতে কোনো বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি বলে প্রশাসন জানালেও বালু উত্তোলনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বলছেন, তারা (প্রশাসন) আমার বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে আমি দেখিয়ে দিলে তারা তখন ড্রেজার ধরে না (বালু উত্তোলনে নিষেধ করেন না)। অবৈধভাবে ভালো উত্তোলন করা হচ্ছে বলেও তিনি স্বীকার করেছেন। এছাড়া একাধিক শ্রমিক বলেছেন, তাদের বালু উত্তোলনের অনুমতি রয়েছে। তারা জানেন যে অনুমোদন নিয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।

প্রশাসন এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের এমন বক্তব্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। প্রভাবশালী মহলের এমন দৃষ্টতাপূর্ণ কাজ দেখে অবাক না হয়ে পারা যায় না। এর দায় প্রশাসন না নিলেও চাইলে তো বের করতে পারে কারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করে পদ্মা সেতুকে হুমকির মধ্যে ফেলছে? আমরা মনে করি, এটা কোনো কঠিন কিছু নয়। আর বের করলেই তো হবে না, এদের এমন দৃষ্টতা দেখানোর জন্য আইনের আওতায় আনা যেমন জরুরি, তেমনি যত দ্রুত সম্ভব পদ্মা সেতুর পিলারের কাছ থেকে বালু উত্তোলনের সব ধরনের কাজ বন্ধ করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close