ড. মো. আজিজুল হক

  ২৬ নভেম্বর, ২০২২

মতামত

মাদ্রাসা শিক্ষায় বাউবির পদক্ষেপ

‘বাউবির দীক্ষা- সবার জন্য উন্মুক্ত, কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা’ স্লোগানকে সামনে রেখে উন্মুক্ত ও দূরশিক্ষণ পদ্ধতির একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়- বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা বাউবি পর্যায়ক্রমিকভাবে জনমানুষের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা বিবেচনায় রেখে যুগোপযোগী বিভিন্ন প্রোগ্রাম চালু করে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।

সে ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত ও অধিকতর যোগ্য করে গড়ে তুলে সরকারি কর্ম পরিকল্পনাকে সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যে চালু হচ্ছে ব্যাচেলর অব মাদ্রাসা এডুকেশন। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে মাদ্রাসায় শিক্ষিত জনশক্তি বিশেষত : মাদ্রাসা শিক্ষক ও বিদ্যালয়গুলোর ধর্মীয় শিক্ষকদের জন্য বিশেষায়িত প্রোগ্রাম ব্যাচেলর অব মাদ্রাসা এডুকেশন চালু করতে বাউবি কর্তৃপক্ষ ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

বাংলাদেশের মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন অনুসারে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর মানুষের দোরগোড়ায় সহজে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার জন্য শিক্ষাবিস্তার কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশে তৃতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সপ্তম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। এসএসসি থেকে পিএইচডি পর্যন্ত ৭৯টি আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক প্রোগ্রামে প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন (এ হিসাব ১৫/১২/২০২২ পর্যন্ত)।

বহুমুখী শিক্ষা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমে অধিকতর গণমুখী ও জীবনঘনিষ্ঠ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে একটি সুপ্রশিক্ষিত ও আত্মনির্ভরশীল জাতি গড়ে তুলতে বাউবি আইনত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বর্তমানে সারা দেশে ৭ হাজার ৯৫৪টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় ১ লাখ ৫০ হাজার ৮০০ জনের অধিক শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়াও ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মাদ্রাসা শিক্ষকদের পেশাগত উৎকর্ষতা সাধনের সুযোগ খুবই সীমিত। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষকের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বিএমটিটিআই) নামক মাত্র একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটি আলিয়া স্তরের মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক স্বল্পতা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছুটি দিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনীহা এবং প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের হোস্টেলে অবস্থান করা বাধ্যতামূলক হওয়ায় খুবই অল্প সংখ্যক শিক্ষক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন।

কিন্তু বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহে মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষাকে সরকার স্বীকৃতি দিয়ে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার ডিগ্রির সঙ্গে সমমান ঘোষণা করেছেন। কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ ডিগ্রিকে মাস্টার্স সমমান ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মাদ্রাসা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি কল্পে মাদ্রাসাগুলোকে আরাবিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছে। ফলে মাদ্রাসার দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিলকে যথাক্রমে এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও মাস্টার্স সমমান ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাউবি কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা শিক্ষক ও স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষকদের পেশাগত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনসম্পদে পরিণত করার প্রয়াসেই চালু করেছেন ব্যাচেলর অব মাদ্রাসা এডুকেশন।

সারা দেশের ১৪টি সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বর্তমান প্রোগ্রামটি পরিচালিত হবে। স্টাডি সেন্টারগুলো হলো- বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গাজীপুর, সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ঢাকা, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসা চট্টগ্রাম, ইসলামিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা কুমিল্লা, সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা, মোমেনশাহী ডিএস কামিল মাদ্রাসা ময়মনসিংহ, সরকারি মুস্তফাবিয়া আলিয়া মাদ্রাসা বগুড়া, ধাপ সাতগড় বায়তুল মুর্কারম মডেল কামিল মাদ্রাসা রংপুর, রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসা, পাবনা কামিল মাদ্রাসা, যশোর আমিনীয়া কামিল স্নাতকোত্তর মাদ্রাসা, সবজাননেছা মহিলা কামিল মাদ্রাসা ফরিদপুর, খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা এবং সাগরদী ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা বরিশাল। বাউবির ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্রের অধীনে সারা দেশে এ প্রোগ্রামটি পরিচালিত হবে। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মাদ্রাসা শিক্ষকরা তার জন্য সুবিধাজনক স্টাডি সেন্টারে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারবেন। ফলে মাদ্রাসা শিক্ষকদের আক্ষেপ দূর হবে এবং নিজেকে প্রশিক্ষিত করে তার অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করে আগের তুলনায় উন্নত ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতে সফল হবেন বলে আশা করা যায়।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বতন্ত্র প্রকৃতির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যান্য সাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে ঝরে পড়া এবং কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের পুনরায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ফিরিয়ে এনে জনশক্তিতে পরিণত করার নেপথ্যে বাউবির ভূমিকা অসাধারণ। বাউবি উন্মুক্ত ও দূর শিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করে থাকে তবে বর্তমানে ক্যাম্পাসভিত্তিক কিছু প্রোগ্রামও পরিচালিত হচ্ছে। বাউবি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ নানাবিধ টেকনোলজি ব্যবহার করে উন্মুক্ত ও দূর শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় ১২টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও ৮০টি উপ-আঞ্চলিক কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের শহর ও গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সব বয়সের সব পেশার এবং সব স্তরের শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার সুযোগ পৌঁছে দিচ্ছে।

স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রয়োজন কর্মমুখী ও গণমুখী শিক্ষা। বাউবি তার প্রশিক্ষিত জনশক্তির সাহায্যে সবার জন্য উন্মুক্ত কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা প্রদানে বদ্ধ পরিকর। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাউবি হতে চায় একজন গর্বিত অংশীদার। আর এ লক্ষ্যেই বাউবির সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সর্বদা অব্যাহত থাকবে।

লেখক : আঞ্চলিক পরিচালক

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল আঞ্চলিক কেন্দ্র।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close