reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ নভেম্বর, ২০২২

শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন প্রশংসনীয়

শিক্ষার মাধ্যমে একটি জাতি এগিয়ে যায়; আরোহণ করে উন্নতির শীর্ষে। তাই একটা রাষ্ট্রে শিক্ষাব্যবস্থার একটা সন্তোষজনক চিত্র সবার কাম্য। শিক্ষার্থীদের আলোকিত ভবিষ্যতের জন্য সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী ও কার্যকরী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এজন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী একটি শিক্ষাক্রম। আর শিক্ষাক্রম হলো শিক্ষার লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্কুল কর্তৃক পরিকল্পিত ও পরিচালিত শিক্ষার্থীর সব শিখন অভিজ্ঞতা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় জাতীয়ভাবে যে শিক্ষা-পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, এক কথায় তাকেই বলে শিক্ষাক্রম। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাই একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাই শিক্ষাকে সঠিকভাবে রূপদানের জন্য প্রয়োজন বাস্তবসম্মত শিক্ষাক্রম। কোনো একটি শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কী বিষয়বস্তুর মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জিত হবে; কখন, কীভাবে, কার সহায়তায় এবং কী উপকরণের সাহায্যে তা বাস্তবায়িত হবে, শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে- এসবের ঠিক করে দেবে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষ।

আশার কথা হলো, আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসছে। বদলে যাচ্ছে শিক্ষাক্রম। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও তা এখনকার মতো শুধু কাগজ-কলমনির্ভর পরীক্ষা হবে না। এখনকার মতো জিপিএভিত্তিক ফল প্রকাশ করা হবে না। প্রতিদিনের সংবাদের এক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মূল্যায়ন ব্যবস্থায় এ রকম বড় পরিবর্তন এনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখার আলোকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নীতিমালা’ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সম্প্রতি এক কর্মশালায় এ নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এনসিটিবির সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন হবে দুই ভাগে- এক ভাগের মূল্যায়ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই, শিখনকালীন নানা কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আরেক অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন, যোগাযোগ, হাতে-কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতি ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথাগত পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রথাগত কোনো পরীক্ষা আর হবে না। সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন হবে। চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান) কিছু অংশের মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন, বাকি অংশের মূল্যায়ন হবে সামষ্টিকভাবে। অবশিষ্ট পাঁচটি বিষয়ের পুরোটাই মূল্যায়ন হবে শিখনকালীন। তবে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে গিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন বেশি হবে (৭০ শতাংশ সামষ্টিক ও ৩০ শতাংশ শিখনকালীন)। নীতিমালা অনুযায়ী, মূল্যায়নের এ নতুন পদ্ধতিতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কোনো শিক্ষার্থীকে আরেকজনের সঙ্গে তুলনা করা হবে না। শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপ করা হবে না গ্রেড বা স্কোরের বাড়তি চাপ। একজন শিক্ষার্থীকে আরো সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত, অর্থপূর্ণ, সৌন্দর্যময় ও কার্যকরী করার জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে শিক্ষা। শিক্ষা ব্যতীত একটি জাতির অগ্রগতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। শিক্ষার মাধ্যমেই ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। শিক্ষায় গলদ থাকলে মনুষ্যত্বের জাগরণ ঘটে না। তাই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে বদলে দিতে সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, তা আশা করি শিক্ষার্থীদের যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close