বুড়িগঙ্গায় ওয়াটার বাস সফলতা কতটুকু
দেশটি নদীমাতৃক। স্বাভাবিক কারণে নদীপথই সবচেয়ে উত্তম পথ হওয়ার কথা। বিশেষকরে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে। নৌপথে পরিবহন খরচ অন্যান্য যে কোনো পরিবহনের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় এর প্রতি মানুষের আকর্ষণও বেশি। কিছুকাল আগেও নৌপথ ছিল রমরমা বাণিজ্যের মাধ্যম। সম্ভবত দেশীয় থিংক ট্যাংকের চরম অবহেলার আবর্তে পড়ে আজ সে পথের বেহালদশা। নদী আজ চলাচলের উপযোগ্যতা হারিয়েছে। নদী দখল আর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে প্রায় প্রতিটি নদীই আজ মৃতপ্রায়। বলা যায়, নদী এখন আইসিইউতে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। বাঁচানোর চেষ্টা যে হয়নি তাও নয়। এখনো চলছে। তবে সরকার যতটা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে, সফলতা ততটা হয়নি। অসুখটা দীর্ঘদিনের। এতদিন চিকিৎসার কোনো চিহ্নমাত্র ছিল না। এখন রোগ অনেকটা জটিল হয়েছে। তাই চিকিৎসাও আর সহজ নেই। প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থার। সরকারকে সেভাবেই ভাবতে হবে। বাস্তবতা বলছে, সরকারের ভাবনাও সেদিকে।
তথ্য মতে, অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে নৌ-পর্যটন বা রিভার ট্যুরিজম। নদীবিধৌত বাংলাদেশের ভূখন্ডজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদণ্ডনদী আর বিস্তীর্ণ জলাশয়। জলাশয়ের মধ্যে রয়েছে হ্রদ, হাওড়-বাঁওড়, খাল-বিলসহ অন্যান্য জলধি। এখানে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট গড়ে তোলা সম্ভব, যা মানুষকে দু-দন্ড শান্তি খুঁজে পাওয়ার ঠিকানা দিতে পারে। তথ্য বলছে, অর্থনীতির চাকাকে শক্তিশালী করার জন্য নদীপথের সংস্কার এবং পর্যটন স্পট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে সরকার। পরিকল্পনাটি ইতিবাচক এবং সর্বজনীন। যদি সফলতা আসে, আমাদের নদীগুলোও আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত বাতাসে চলার একটা সুযোগ পাবে। ফিরে পাবে নতুন জীবন।
নদী আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। নদী তীরবর্তী মানুষের জীবন এবং নদীকে কেন্দ্র করে চলা কার্যক্রম সম্পর্কে না জানলে বাংলাদেশকে জানা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। আর সে কারণেই নদীগুলো পর্যটনের অন্যতম অণুঘটক হতে পারে। সিদ্ধান্তটি নতুন নয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বুড়িগঙ্গা নদীতে ওয়াটার বাস চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। বাদামতলী ঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত যাত্রী পরিবহনের কথা ছিল। কিন্তু তা চলতে পারেনি। অর্থাৎ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। এখানে একটি কথা না বললেই নয় যে, ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না। এক্ষেত্রে কাজে নামার আগে সফলতা কীভাবে আসবে তার পূর্ণাঙ্গ রূপায়ন ছিল না। অর্থাৎ ভাবনায় ঘাটতি ছিল। আর সে কারণেই মাঝপথে এসে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে।
তথ্য মতে, শুরুতেই বিআইডব্লিউটিসির নেতিবাচক অবস্থান ছিল। তাদের যুক্তি ছিল, বিদ্যমান নৌপথ ওয়াটার বাস চলার উপযুক্ত নয়। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। তাই বলে ওয়াটার বাস চালানোর পরিকল্পনা শেষ হয়ে যায়নি। শেষ করলে পর্যটন সেক্টরের একটি সু-সম্ভাবনার অপমৃত্যু হবে। তাই প্রথম ব্যর্থতাকে সামনে রেখে দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা করতে হবে। ওয়াটার বাস চালাতে হলে সর্বাগ্রে নান্দনিক নৌপথের ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। নৌপথ এবং নদীকে তার যৌবন ফিরিয়ে দিতে হবে। পৃথিবীর সর্বত্রই যৌবনের আকর্ষণ সবসময়ই বেশি। নদী তার যৌবন ফিরে পেলে মানুষ সেই যৌবনের আকর্ষণে সেখানে ঝাঁপ দেবেই। পর্যটনও ফিরে পাবে তার যৌবনদীপ্ত সময়।
"