reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ অক্টোবর, ২০২২

তেলের বাজারে অশনিসংকেত

এমনিতেই গোটা বিশ্ব আজ সংকটের বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে। সংকট তৈরির মূলে ছিল করোনা মহামারি। তারপর এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধকে সামনে রেখে ভাগ হলো পৃথিবী। সেই ভাগাভাগির মাঝে প্রধান অস্ত্র হিসেবে সামনে এলো জ্বালানি তেল ও গ্যাস। চাহিদা ও জোগানের জাঁতাকলে পড়ে জনজীবনে বাড়ল দুর্ভোগ। সে দুর্ভোগ এখনো সরেনি। ভুগতে হচ্ছে কম-বেশি ছোট-বড় সবাইকে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে। ঠিক এমন একটা সময়ে আবারও অশনিসংকেত। মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, ঘনীভূত হতে পারে জ্বালানি তেলের সংকট। সংবাদে বলা হয়, আগামী সপ্তাহ থেকে প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেলেরও বেশি তেলের উৎপাদন কমানোর কথা বিবেচনা করবে ওপেক প্লাস।

উৎপাদন কমলে চাপ পড়বে মূল্যের ওপর। এটাই স্বাভাবিক। চাহিদার তুলনায় জোগান কমলে বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তথ্য বলছে, করোনা মহামারির পর এটি হবে সবচেয়ে বড় উৎপাদন হ্রাস। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বিশ্ববাজারে তেলের সংকট আরো ঘনীভূত হতে পারে এবং জ্বালানির দাম আরো বাড়তে পারে। তথ্য মতে, তেলের দর পতন ও কয়েক মাস ধরে বাজারে তীব্র অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে আজ ওপেক প্লাস সদস্যভুক্ত দেশগুলো এ বিষয়ে জরুরি সভায় মিলিত হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রধান গ্রাহকদের চাপ সত্ত্বেও তেলের দাম কমানো ও উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়টি এরই মধ্যে প্রত্যাখ্যান করেছে সংস্থাটি। সংস্থাটি যদি তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছে। তবে আশার কথা ওপেকভুক্ত সব দেশ এ বিষয়ে একমত হতে পারেনি।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে তেল-সংকট এমনিতেই বাড়তির দিকে। পাল্লা দিয়ে মূল্যবৃদ্ধিও হয়েছে এবং হচ্ছে সমানতালে। এর মাঝে ওপেক প্লাস ও সহযোগীদের উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তেলের বাজারকে আরো অস্থির করে তুলতে পারে বলেই সবার ধারণা। এমনিতেই বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা অনেকটা নাজুক। বিশ্ব এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। তাই, আমরাও এর বাইরে থাকতে পারিনি। বিশ্বে যে কোনো প্রান্ত অস্থির হলে তার প্রতিক্রিয়ার কিছু অংশ হলেও আমাদের ওপরে এসে পড়ে। আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হই। তাই সংকট মোকাবিলায় ঐক্যই সেরা পথ। কথাটা সবার জানা থাকলেও বিশ্বসম্প্রদায় ঐক্যের বৃত্তে আসতে পারেনি। তাই, সংকট মোকাবিলার প্রথমেই নিজের অস্তিত্ব রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। আসন্ন তেল সংকট আমাদের সে সতর্কবার্তাই দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবার আগে আমাদের ব্যয় সংকোচন নীতিকে গ্রহণ করতে হবে। কৃচ্ছ্রতা সাধনই হতে পারে পরিত্রাণের উৎকৃষ্ট পথ। পাশাপাশি সরকারকেও নতুন কোনো কৌশলের কথা ভাবতে হবে।

বিশ্বব্যাপী যে সংকট চলছে তা শিগগিরই সরে যাওয়ার নয়। তাই এ সংকট মোকাবিলায় আমাদের দেশজ উৎপাদনের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে কৃষিজাত পণ্যের উৎপাদন। ঘরে খাবার থাকলে অন্যত্র কৃচ্ছ্রসাধন সহজতর হবে এবং সংকট মোকাবিলাও নান্দনিকতায় ভরে উঠবে। আশা করি, জাতি হিসেবে আমরা কখনো পরাজিত হইনি এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close