রায়হান আহমেদ তপাদার

  ০৩ অক্টোবর, ২০২২

বিশ্লেষণ

ইউরোপের ঐক্য ভাঙার নেপথ্যে

ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ওপর প্রভাব বিস্তারকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি শুধু কার্বন নিরপেক্ষতা উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যই ক্ষতিকর নয়, মহাদেশব্যাপী জীবিকা বা কর্মসংস্থানের উপরেও স্বল্পমেয়াদিভাবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব বর্তমান। একটি যুদ্ধের পটভূমিতে ইউরোপের নিরাপত্তা সংকট চরমে পৌঁছেছে, যেমনটা ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী সময়ে আর কখনো ঘটেনি। অধিকাংশ ইউরোপীয়ই ইউক্রেনের ঘটনাটিকে এমন একটি সংকট বলে মনে করা হচ্ছে- যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইউরোপীয় প্রশাসনের ওপরে। রাশিয়ার আক্রমণের ঘটনায় পোল্যান্ডও যারপরনাই চিন্তিত। কারণ এই দুই দেশের মধ্যে একটি সাধারণ সীমান্ত বিদ্যমান এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে উদ্বাস্তু স্রোত শুরু হয়েছে। সাম্পতিক মাসগুলোতে আইনের শাসনের প্রাধান্য এবং গণতান্ত্রিক কার্যকারিতার পথে বাধাদানকারী অন্যান্য বিষয় নিয়ে পোল্যান্ড এবং ব্রাসেলসের মধ্যে তীব্র মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বোপরি, পোল্যান্ড ও বেলারুশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পরে উদ্বাস্তু সংকট পোল্যান্ড এবং ইইউ উভয়ের জন্যই একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলে অঞ্চলটিতে যে অর্থনৈতিক দুর্দশার সৃষ্টি হবে তার ভয়ে বাল্টিক দেশগুলো চুপ করে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অন্যান্য দেশ বড় পরিসরে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইউরোপীয় কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়া হয় এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা তুলে নেওয়া হয়।

চলতি বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করে। এ আগ্রাসন মোকাবিলা করতে গিয়ে ইইউর মধ্যে অসাধারণ ঐক্য দেখা দিয়েছিল। কিন্তু চলতি মাসের শুরুর দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও বলেছেন, ইউরোপের ঐক্য এখন প্রধানতম উদ্বেগ। আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করাই রাশিয়ার পরিচালিত ইউক্রেন যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মর্কেলের বিদায়ের পর ম্যাক্রোঁ নিজেকে ইউরোপের শীর্ষ নেতা বলে মনে করছেন। বারবার করে তিনি ইইউর মধ্যে সংহতি ও সমন্বয়ের তাগিদ দিচ্ছেন। আবার ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও বজায় রাখার ওপরও জোর দিচ্ছেন। এ বছরের শুরুর দিকে ইউক্রেনে রাশিয়া আগ্রাসন শুরু করে। এ আগ্রাসন মোকাবিলা করতে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অসাধারণ ঐক্য দেখা দিয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি তেলকে কেন্দ্র করে এখন সে ঐক্যে ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁও বাল্টিক অঞ্চল ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর নেতাদের যুদ্ধ প্ররোচনাকারী হিসেবে চিত্রিত করে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করছেন। আবার তিনি বলছেন, আমাদের পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর রাশিয়ার বিরুদ্ধে একা পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না। এদিকে জনতুষ্টিবাদী দলগুলো ইউরোপের রাজনীতিতে শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলছে। এ মাসের শেষে ইতালিতে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে অতি ডানপন্থিদের জোট। ব্রাদার্স অব ইতালি দলের জর্জা মেলোনির নেতৃত্বে এ জোটে প্রধান দুই সহযোগী হলো নর্দার্ন লিগের মাতেও সালভানি ও ফোরজা ইতালির সিলভিও বার্লুসকোনি। মূলধারার ভোটারদের মন জয় করতে মেলোনি ইউক্রেন সংকটকে প্রথাগতভাবেই ব্যবহার করেছেন। কিন্তু তার প্রধান জোটসঙ্গী এবং ইউরোপের জনতুষ্টিবাদী দলগুলো জ্বালানি সংকটের প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর কেন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, সে প্রশ্ন তুলছে। বাল্টিক ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ইউরোপে রাজনৈতিকভাবে প্রান্তিক অবস্থায় ছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ দেশগুলো মহাদেশের রাজনীতিতে জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যে বিপুল শক্তি নিয়ে আক্রমণ করতে যাচ্ছে, সে ধারণা এ দেশগুলো আগে থেকেই দিয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের বড় দেশ ফ্রান্স শেষ মুহূর্তে এসেই বিষয়টি আঁচ করতে পারে। এ বছরের শুরুতে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ম্যাক্রোঁ বরং বলেছিলেন, ইউক্রেনে বড় কোনো যুদ্ধে জড়াবে না রাশিয়া। মস্কো সফরশেষে ম্যাক্রোঁ খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন তার তৎপরতা সম্পর্কে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন, রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে ইউরোপের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা যাবে না। যুদ্ধ শুরুর পর বাল্টিক ও পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনের জন্য অস্ত্রের জোগান দিয়েছে। কিয়েভে মানবিক ও সামরিক সহায়তা বাড়ানোর জন্য ইউরোপের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। মাথাপিছু আয় বিবেচনা করলে ইউক্রেনে সামরিক ও মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাল্টিক দেশ এস্তোনিয়া সবচেয়ে এগিয়ে।

পরিমাণের দিক থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পোল্যান্ড সবচেয়ে এগিয়ে। ইউক্রেনে পূর্ব ইউরোপের এই সহযোগিতা অত্যুক্তি নয়। গত মাসে পোল্যান্ড নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ৫ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। প্রতিবেশী ইউক্রেনকে বড় পরিসরে সামরিক সহায়তা দেওয়ায় তাদের অস্ত্রাগারে টান পড়েছে। সরাসরি এসব সহায়তা ছাড়াও পূর্ব ইউরোপ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও বড় ছাড় দিচ্ছে। ইউরোপের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি ২৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এস্তোনিয়ায়। এরপরও ক্রেমলিনের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জোর গলায় বলছে দেশটি। পোল্যান্ড রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য নিজেদের আইন সংশোধন করছে। মস্কোর প্রভাববলয়ে শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে থাকার পরও পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলো এখন মস্কোর ওপর আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞার জন্য সুপারিশ করছে। এর মধ্যে রাশিয়ার নাগরিকদের ভিসা প্রদান বন্ধের প্রসঙ্গও আছে। গত সপ্তাহে লাটভিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এডগার রিনকেভিকস ঘোষণা দেন, বাল্টিক দেশগুলো শেনজেন ভিসাধারী বাদে রাশিয়ার অন্য নাগরিকদের জন্য তাদের সীমান্ত প্রায় পুরোপুরি বন্ধ করতে চলেছে। অতি সম্প্রতি আটটি বাল্টিক ও নর্ডিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকের একটি যৌথ চুক্তিতে পৌঁছাতে সম্মত হয়েছেন। রাশিয়ার নাগরিকদের ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চান তারা। তবে এ চুক্তি পাস হতে গেলে ব্রাসেলসে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়বে। এর আগে মস্কো থেকে জ্বালানি আমদানির ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবে বিরোধিতা করেছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ। এবারেও তিনি রাশিয়ার নাগরিকদের ওপর পূর্ণমাত্রায় ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আরোপের বিরোধিতা করেছেন। এদিকে ম্যাক্রোঁও মস্কোর সঙ্গে খোলাখুলি যোগাযোগ বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।

এদিকে রাশিয়ার ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার ফলে ইউরোপজুড়ে মূল্যস্ফীতির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বড় দেশগুলোতে বিশাল বিক্ষোভ হচ্ছে। ফলে ক্রেমলিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ জনতুষ্টিবাদী দলগুলো ইউরোপে তাদের ভিত্তি গড়ে তুলছে। ইতালিতে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ফলে মারিও দ্রাগির নেতৃত্বে পরিচালিত মধ্যপন্থি জোট সরকারের পতন হয়। এখন মেলোনির নেতৃত্বে অতি ডানপন্থিদের জোট প্রতিদ্বন্দ্বী মধ্য বামপন্থিদের থেকে দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। মেলোনির জোটের দুই বড় অংশীদার সালভানি ও বার্লুসকোনি রাশিয়ার প্রতি ব্যাপকভাবে সহানুভূতিশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তৃতীয় অর্থনীতি ইতালিতে জীবনযাত্রার ব্যয় প্রচন্ড বেড়ে গেছে। বড় ধরনের জ্বালানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সালভানির রাজনৈতিক ভিত্তি উত্তর ইতালিতে। মস্কোর সঙ্গে ব্যবসার অবনতি ও জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে সেখানকার জনজীবনে বড় প্রভাব পড়েছে। এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে, অতি ডানপন্থি জোটের আসন্ন বিজয় ইউক্রেন ইস্যুতে ইতালির পররাষ্ট্রনীতির বদল ঘটাবে কি না। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে কতটা সহায়তা দেওয়া যাবে, বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইউরোপের জ্বালানি বাজার থেকে শুরু করে রাজনীতির ময়দান সবখানেই গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ।

ইউক্রেন আক্রমণ করায় ইউরোপ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর তরফে রাশিয়ার উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দেওয়ার ফলে সমগ্র ইউরোপ এক ভয়ঙ্কর শক্তি সুরক্ষা প্রহেলিকার সম্মুখীন। ইইউ তার মোট গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম তেলের যথাক্রমে ৩৯ শতাংশ এবং ৩০ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করে। সিইই দেশগুলো গ্যাসের জন্য রাশিয়ার ওপর শতভাগ নির্ভরশীল। ইইউ রুশ আমদানির বিকল্প হিসেবে কাতার এবং জাপানকে এলএনজি রপ্তানি করতে অনুরোধ জানিয়েছে। এটি যদিও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার একটি সাময়িক সমাধান মাত্র।

রাশিয়া এখন যেসব পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে সেগুলোর পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে অনেক পশ্চিমা নীতিনির্ধারক ভুল ধারণা পোষণ করেছেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো, জ্বালানির ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি। ইউরোপে ব্যবহৃত গ্যাসের ৪০ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। আসন্ন শীত মৌসুমে গ্যাসের আমদানি ও দাম ইউরোপের রাজনীতির প্রধান বিষয় হয়ে উঠবে। জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালির ট্যাবলয়েড পত্রিকায় শীতের সময় বরফে জমে যাওয়া বাড়িঘরের অবস্থা কেমন হবে, সে চিত্র তুলে ধরছে। ইউরোপের প্রধান এ তিন দেশের সম্ভাব্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। জার্মানির অর্থনীতি নিয়ে সাম্প্রতিক এক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়ার গ্যাস যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশটির জিডিপি ৩ শতাংশ কমে যাবে। এখন পর্যন্ত ইউরোপের ৭৮ শতাংশ মানুষ রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করছে। কিন্তু অনেকে এ কথাও বলছে যে এর ফলে তাদের মূল্য দিতে হচ্ছে। জার্মানিতে ৫১ শতাংশ মানুষ মনে করছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার চেয়ে জার্মানি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে সরে আসেনি। আবার রাশিয়ায় পুতিনের ক্ষমতা আরো সংহত হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের ছয় মাসে পশ্চিমারা এর প্রভাব যতটা পড়বে বলে মনে করেছিল, বাস্তবে তা হয়নি। তবে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর যে চাপ পড়ছে, তার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই চাপ তীব্র হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ততোদিনে বিশ্ব বাস্তবতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলাটা খুবই কঠিন।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close