reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ অক্টোবর, ২০২২

ই-টিকিটেও অনিয়ম

একটা গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। রাজ্যের সবচেয়ে বড় বাটপার। তাকে কোনো কিছু দিয়েই ঠেকানো যাচ্ছে না। রাজার ইচ্ছা তাকে জেলে না পুরে ঠিক করতে হবে। সভা ডাকলেন, কী করা যায়। বিজ্ঞজনরা যে যার মতো পরামর্শ দিলেন। পরামর্শের বান্ডেল খুলে রাজা ঘোষণা করলেন, তাকে সমুদ্রের পাশে বসিয়ে ঢেউ গোনার কাজে লাগিয়ে দাও। সূর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত তাকে এই কাজে ব্যস্ত রাখা হোক। যেই কথা সেই কাজ। বাটপার গিয়ে বসল সাগর পাড়ে। ব্যস্ত হয়ে পড়ল তার কাজে। এ সময় দূরে সে একটি জাহাজ আসতে দেখল। কাছে আসার পর সে নাবিককে জাহাজ থামাতে বলল। জাহাজ থামিয়ে নাবিক তার কাছে এসে বলল, কেন জাহাজ থামাতে বললে? প্রত্যুত্তরে বাটপার বলল, তুমি রাজার কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছ। তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। নাবিক বলল, কীভাবে!

বাটপার বলল, রাজা আমাকে সাগরের ঢেউ গুনতে নির্দেশ দিয়েছেন। তুমি জাহাজ দিয়ে সেই ঢেউগুলোকে ভেঙে দিয়েছ। এ অপরাধে রাজা নিশ্চয়ই তোমাকে ক্ষমা করবেন না। নাবিক কিছুটা ভয় পেয়ে বলল, তাহলে উপায়? বাটপার বলল, উপায় একটা আছে। নাবিক বলল, বলুন। বাটপার তখন একগাল হাসি নিয়ে বলল, আমরা নিজেদের মধ্যে রফা করতে পারি। তবে সন্তর্পণে। ঝামেলা এড়াতে নাবিক রাজি হয়ে গেল। আর এভাবেই চলতে লাগল বাটপারের ঢেউ গোনার বাণিজ্য। গল্পটি একটি প্রবচনের কথা মনে করে দিল, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’।

আমাদের দেশে এ রকম ঘটনাও যে ঘটে না, তাও নয়। অহরহই ঘটছে। তবে টেকনিকের ক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়, নতুন অজুহাতে ই-টিকিটেও বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অজুহাতটি ভিন্ন। পত্রিকায় দেওয়া তথ্যমতে, গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে শুরু হওয়া ই-টিকিটিংয়েও স্বস্তি আসেনি। নতুন সমস্যা হিসেবে খুচরা টাকার অভাবকে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাচ্ছেন বাসের শ্রমিকরা। এক বা চার টাকার হেরফেরে খুচরা না থাকার অজুহাতে যাত্রীদের ঠকানো হচ্ছে। টিকিট বিক্রেতার কাছে এক-দুই টাকার নোট থাকে না। আবার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কমও গ্রহণ করেন না। বেশি দিলে ভেজাল মিটে যায়। বছর দশেক আগেও সকালে মোড়ে মোড়ে এক বা দুই টাকার বান্ডেল বিক্রি হতো। ক্রেতা ছিলেন প্রধানত বাসের শ্রমিকরা। ভাড়া কাটার সুবিধার জন্য এ টাকা কিনতেন তারা। নতুন অজুহাত তৈরি করার লক্ষ্যে এখন তারা এ পথ পরিত্যাগ করে অন্য পথে চলতে শুরু করেছেন।

বছরের পর বছর ধরে যাত্রী ঠকিয়ে যাওয়ার পর কিলোমিটারের ভাড়া হিসাব করে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করতে যে ই-টিকিটিং পদ্ধতি চালু হয়েছে, তাতে ভাড়া ক্ষেত্রবিশেষ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। তবে সেই এক বা দুই টাকার নোটের কৃত্রিম অভাবে এই ভাড়া কমার পুরো সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। আমরা জানি, দুর্বৃত্তদের অজুহাত তৈরিতে অসীম দক্ষতা। এ কথা মনে রেখেই ব্যবস্থাপনাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মনে করি, চলমান অজুহাত ঠেকাতে নতুন করে ভাবতে হবে। পরিকল্পনামাফিক কাজ করতে হবে এবং সর্বদা স্বচ্ছ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা কোনোভাবেই একটি মহৎ কর্মযজ্ঞের অপমৃত্যুর সাক্ষী হতে প্রস্তুত নই। সমস্যাটি জটিল নয়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে এলেই সমাধান সম্ভব বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close