reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মৃত্যুর আতঙ্ক জলাতঙ্ক

র‌্যাবিস ভাইরাস ঘটিত একটি মারাত্মক রোগ জলাতঙ্ক। আমাদের দেশে জলাতঙ্ক রোগে বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। জলাতঙ্কের ক্ষেত্রে মৃত্যুহার প্রায় শতভাগ। অর্থাৎ রোগ লক্ষণ একবার প্রকাশ পেলে রোগীকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, বানর, বেজি, বাদুড় ইত্যাদি র‌্যাবিস জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে আক্রান্ত প্রাণী মানুষকে কামড়ালে মানুষের এ রোগ হয়। এসব আক্রান্ত প্রাণীর মুখের লালায় র‌্যাবিস ভাইরাস থাকে। এ লালা পুরোনো ক্ষতের বা দাঁত বসিয়ে দেওয়া ক্ষতের বা সামান্য আঁচড়ের মাধ্যমে রক্তের সংস্পর্শে এলে রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং জলাতঙ্ক রোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের দেশে শতকরা ৯৫ ভাগ জলাতঙ্ক রোগ হয় কুকুরের কামড়ে।

সন্দেহজনক প্রাণী কামড়ানোর ৯ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দেয়। কারো শরীরে জলাতঙ্কের লক্ষণ দেখা দিলে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে পাগলামো আচরণ এবং মৌন আচরণ- এ দুই ধরনের আচরণ দেখা দিতে পারে। অস্বাভাবিক আচরণে আক্রান্ত ব্যক্তির কথাবার্তা ও ভাবভঙ্গি হবে অস্বাভাবিক। সে উদ্দেশ্য ছাড়াই ছুটে বেড়াবে, ক্ষুধামন্দা হবে, বিকৃত আওয়াজ করবে, বিনা প্ররোচনায় অন্যকে কামড়াতে আসবে। এ ছাড়া পানির পিপাসা খুব বেড়ে যাবে, তবে পানি খেতে পারবে না। পানি দেখলেই আতঙ্কিত হবে, ভয় পাবে। আলো-বাতাসের সংস্পর্শে এলে আতঙ্ক আরো বেড়ে যাবে। খাবার খেতে খুবই কষ্ট হবে, খেতে পারবে না। শরীরে কাঁপুনি, মুখ দিয়ে অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ হবে। কণ্ঠস্বর কর্কশ হতে পারে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে। সর্বদাই আক্রমণাত্মক আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

পরিমাণগত দিক থেকে রোগটি খুব বেশি না হলেও প্রাণঘাতী বটে। মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ। জলাতঙ্ক রোগের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ষাট হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটে। তবে সাবধানতা দিতে পারে মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে। সন্দেহভাজন প্রাণী কামড়ানো বা আঁচড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতস্থানটি ১০-২০ মিনিট ধরে সাবান ও প্রবহমান পানি দিয়ে ধুয়ে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দ্রবণ দিয়ে ভালো করে পরিষ্কার করার পর ক্লোরহেক্সিডিন বা পোভিডোন আয়োডিন সহযোগে ক্ষতস্থানটিকে ভালো করে ওয়াশ করলে ৭০-৮০ ভাগ জীবাণু নষ্ট হওয়ার সুযোগ থাকে। এরপর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অথবা নিকটবর্তী হাসপাতালে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শমতো র‌্যাবিস ভ্যাকসিন নিতে হবে। সাধারণত প্রথম দিন দেওয়ার পর ৩, ৭, ১৪ ও ২৮তম দিনে মোট ৫টি ডোজে ভ্যাকসিন দিতে হয়।

এই রোগ একবার হলে মৃত্যু অনিবার্য। সাধারণত লক্ষণ দেখা দেওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই রোগী মৃত্যুবরণ করে। কোনো অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে না। শুধু উপশমমূলক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব। এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো টিকা নেওয়া। এই ভাইরাসের অনেক রকম টিকা আবিষ্কার হয়েছে, তবে সবচেয়ে নিরাপদ টিকা হলো হিউম্যান ডিপ্লয়েড সেল ভ্যাকসিন। তবে একমাত্র ভ্যাকসিনই নয়, সচেতনতা ও সাবধানতাই এ রোগের সবচেয়ে বড় চিকিৎসা। সুতরাং অবহেলা নয়, একটু সচেতনতাই আপনাকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close