কৃষি খাতে মাশরুম বিপ্লব ঘটাতে পারে
কিছুদিন আগেও মাশরুমের নামটাও কেউ জানত না। অনেকে ব্যাঙের ছাতাকে মাশরুম বলে ভুল করত। দেখতে ব্যাঙের ছাতার মতো হলেও মাশরুম একটি পুষ্টি মিশ্রিত সুস্বাদু সবজি। সবজিটি দেশে এখনো তেমন একটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারলেও বিদেশে এর চাহিদা প্রচুর। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও জমির পরিমাণগত দিক বিবেচনা করে এই সবজি চাষের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। অল্প জমিতে অধিক ফলনের কথা চিন্তা করে সরকার এই খাদ্যপণ্য উৎপাদনের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। দেশে এখনো তেমন চাহিদা গড়ে না উঠলেও ভবিষ্যতের চাহিদা মাথায় রেখেই এ ভাবনা এবং উদ্যোগ। তবে বিদেশে এর চাহিদা প্রচুর। বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও প্রচুর। সংশ্লিষ্টদের মতে, ভবিষ্যতে কৃষি অর্থনীতিতে মাশরুম এক নবযুগের সূচনা করতে পারে।
এমনিতেই বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। জনসংখ্যার চাপ এবং খাদ্য উৎপাদন সমান্তরাল নয়। খাদ্যে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। চাহিদা অনুপাতে এখনো উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। বর্তমান বিশ্বের অস্থির বাস্তবতায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা জরুরি। তাই প্রথাগত কৃষিপণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যের দিকেও আমাদের অগ্রহ বাড়াতে হবে। সরকারও সেভাবেই চিন্তা করছে। তাই মাশরুম চাষকে বাণিজ্যিকভাবে কাজে লাগাতে চাইছে সরকার। তথ্যমতে, দেশে ও বিদেশে মাশরুমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে মাশরুম চাষে প্রশিক্ষণ ও বিপণন বাড়াতে ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মাশরুমের ২৫টি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে চাষ ও সংরক্ষণ উপযোগী টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উচ্চ পুষ্টিমান সমৃদ্ধ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উৎপাদন এবং ৮০০ মাশরুম শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি ও মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে। তথ্যমতে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার টন মাশরুম উৎপাদন হচ্ছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। প্রায় দেড় লাখ মানুষ মাশরুম ও মাশরুমজাত পণ্য উপাদন এবং বিপন্ন সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ প্রায় সব দেশই মাশরুম আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাশরুম রপ্তানির অনেক সুযোগ রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মাশরুম চাষের জন্য কোনো আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘনবসতিপূর্ণ ও দ্রুতবর্ধনশীল জনসংখ্যার দেশে খাবারের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে অথচ খাবার জোগান দেওয়ার জমি ক্রমাগত কমছে। এ অবস্থায় অনুৎপাদনশীল জমির স্বল্প পরিমাণ ব্যবহার করেই বিপুল পরিমাণ মাশরুম উৎপাদন করা যায়। সুতরাং মাশরুম চাষ যে এ দেশের জন্য কতটা উপযোগী, তা আর নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন পড়ে না।
আমাদের জন্য সুখবর, এ যাবত মাশরুমের ১৬২ জাত দেশে এসেছে। মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট চাষের উপযোগী প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। দেশের পাহাড়ি ও বনাঞ্চল থেকেও ১৪০টি জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। সরকার ৯৮ কোটি টাকার যে প্রকল্প গ্রহণ করেছে তাকে দেশের ১৬০ উপজেলা ও ১৫টি মেট্রোপলিটন থানা এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এখানকার প্রতিটি এলাকার পরিবেশ মাশরুম চাষের উপযোগী। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই তা চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য নিঃসন্দেহেই ইতিবাচক। আগামীতে মাশরুম বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি বিশেষ পণ্য হিসেবেই বিবেচিত হবে। তাই এ উদ্যোগকে স্বাগত।
"