reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সুন্দরবনের জেলেদের ভাগ্য খুলবে কবে

পানির ধর্ম নিচের দিকে গড়ানো। শুধু কি পানিই! না, আরো আছে, ‘দুর্ভোগ’। শব্দটির ধর্মও নিচের দিকে প্রবাহিত হওয়া। হতদরিদ্র কিংবা দুর্বলের ওপর চেপে বসাটাই শব্দটির ধর্ম। তবে পানির ধর্মের সঙ্গে শব্দটির ধর্মের কিছু পার্থক্য আছে। পানি পরিচালিত হয় প্রাকৃতিক নিয়মে, এখানে মানুষের কোনো হাত নেই। দুর্ভোগের পরিচালক প্রকৃতি ও মানুষ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ভোগের জন্ম মানব সম্প্রদায়ের হাতে। নিজেরাই নিজেদের দুর্ভোগ ডেকে আনে। আবার এই দুর্ভোগ গড়াতে গড়াতে শেষমেশ হতদরিদ্র ও দুর্বলের ওপরই চেপে বসে। সচরাচর সবলকে স্পর্শ করে না বা স্পর্শ করার সাহস পায় না। পানির ক্ষেত্রে আমরা প্রকৃতিকে দায়ী করতে পারি। দুর্বলের ওপর চেপে বসাকে কখনো প্রকৃতিকে দায়ী করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা অর্থাৎ মানুষের ভূমিকাই প্রধান, সমাজ ব্যবস্থাপনাই মুখ্য।

আর সেই ব্যবস্থাপনার কারণেই সুন্দরবনে জেলেদের দুর্দশা বা দুর্ভোগ কমছে না কিছুতেই। দারিদ্র্যের কশাঘাতে ভেঙে পড়া সংসারকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও নিজের মেরুদন্ডের ওপর দাঁড় করাতে পারছে না। অবশ্য অতীতের ইতিহাসও তথৈবচ। তথ্য বলছে, তিন মাস আগে সুন্দরবনের পাস, পারমিট বন্ধ করে দেয় বন বিভাগ। ১ সেপ্টেম্বর তা আবার উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জেলেদের দুর্দশা কাটেনি এখনো। জেলেরা বলছেন, পাস-পারমিট মিললেও মাছ-কাঁকড়া মিলছে না। কিন্তু কেন?

অভিযোগ রয়েছে, সুন্দরবনে যখন মাছ শিকার নিষিদ্ধ ছিল, তখন অসাধু কিছু বন কর্মকর্তাকে উৎকোচ দিয়ে অবৈধভাবে সুযোগ নিয়েছিলেন কিছুসংখ্যক অসাধু জেলে। সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে অবৈধ ভেষাল জাল ও কীটনাশক ব্যবহার করে তারা ব্যাপকভাবে মাছ শিকার করেন। পাস-পারমিট চালু হলেও অবৈধ জাল ও অবৈধভাবে মৎস্য শিকার এখনো থেমে যায়নি। থামেনি কীটনাশকের ব্যবহার। যে মানুষগুলো নিষিদ্ধকালে অবৈধ পথে অবৈধ জাল ও কীটনাশক ব্যবহার করে পরিবেশকে ধ্বংস করেছে, তাদের কখনো আইনের আওতায় আনা হয়নি। সবসময়ই থেকেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরিষার মধ্যেই যদি ভূতের আবাস হয়, তাহলে সেই সরিষা দিয়ে ভূত তাড়ানো কখনোই সম্ভব নয়। সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর ফলে পানি নিচের দিকেই গড়িয়েছে। মহাজন ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে মাছ ও কাঁকড়া ধরতে গিয়ে চাহিদামতো তা না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।

এদিকে পাস-পারমিট বন্ধ থাকার সময় একদল সুন্দরবনে ঢুকে অবৈধভাবে বিষ প্রয়োগ করে যে মাছ শিকার করেছে এবং এখনো করছে, তার প্রমাণ উরুবুনিয়া খালের নলবুনিয়া এলাকায় বিষ প্রয়োগের ঘটনা। বন কর্তৃপক্ষ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছে, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। দেশের অভ্যন্তরে এ রকম ঘটনা সামনে এলে তদন্ত শুরু হয়। একসময় সবার অলক্ষ্যে তা ডিপফ্রিজে স্থানান্তরিত হয়ে যায়। আবার পানির চিরায়ত ধর্মের মতো নিচের দিকে গড়াতে শুরু করে। বাড়ে হতদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। জেলেদের ঘরে উনুন জ্বালানোর মতো জ্বালানির জোগাড় হয়নি। অভাবের মুখে দুমুঠো ভাত তুলে দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন স্থানীয় জেলেরা। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, সুন্দরবনের জেলেদের ভাগ্য খুলবে কবে?

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close