reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

পরিবেশ রক্ষায় সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে

পরিবেশকে বলা হয় জীবনীশক্তির বাহক। সৃষ্টির শুরু থেকে এর কোনো ব্যতিক্রম নেই, ব্যত্যয়ও ঘটেনি। আর যখনই ঘটেছে কিংবা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে তার প্রতিফল মানুষ পেয়েছে। মনে রাখা উচিত পরিবেশের সঙ্গে প্রাণীর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার ওপরেই তার অস্তিত্ব নির্ভর করে। যুগ যুগ ধরে এটাই প্রমাণিত সত্য। কিন্তু হাল আমলে ভোগবাদী মানসিকতা ও বৈষয়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে হেন কোনো কাজ নেই মানুষ করছে না। যা পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। বালুর পাশাপাশি নদীর তলদেশ থেকে উঠানো হচ্ছে নুড়ি। ড্রেজার থেকে নির্গত মবিল নদীর পানিতে মিশে মাছ ও জলজ প্রাণীর ক্ষতি করছে। নদীর তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পড়েছে হুমকির মুখে।

বলা সংগত, আধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত অবকাঠামো নির্মাণে অবৈধভাবে যে হারে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, তাতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব আজ কঠিন সংকটের মুখে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ ও নদী দখল-দূষণের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও কেন অবৈধ দখলদার-বালু উত্তোলকদের বিরুদ্ধে কঠোর ভূমিকা নেওয়া হয় না, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তাদের কালো থাবায় এবার বিলুপ্ত হতে চলেছে উপকূলীয় জেলা বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ার চরে অবস্থিত শুভ সন্ধ্যা সমুদ্রসৈকত। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা কারণে বিলুপ্তির পথে শুভ সন্ধ্যা সমুদ্রসৈকতের ঝাউবন। আট বছর আগেও যেখানে হাজার হাজার ঝাউগাছ দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে এখন নামমাত্র কিছু গাছের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। বনবিভাগ ২০১৪-১৫ সালে সৈকতের ১০ হেক্টর ও ২০২০-২১ সালে ৭ হেক্টর জায়গায় ঝাউগাছের চারা রোপণ করে। এতে সৈকতে সবুজ বেষ্টনী তৈরি হয়। কিন্তু ২০১৮-১৯ সাল থেকে সমুদ্রের ঢেউয়ের ঝাপটায় শুরু হয় বালুক্ষয়। আর অব্যাহত বালুক্ষয়ের কারণে ভাঙতে শুরু করে ঝাউবন। এখন মাত্র ৫০ থেকে ৬০টি ঝাউগাছ টিকে আছে। বনবিভাগের গাফিলতি, সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির অব্যবস্থাপনা, সৈকত থেকে বিভিন্ন সময়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে ঝাউবন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব শুভসন্ধ্যার ঝাউবন সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন বিপর্যস্ত হবে। তেমনি উপকূলীয় এলাকার আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।

তাই প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও বাস্তুসংস্থান রক্ষায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরো তৎপর হতে হবে। গত কয়েক দশকে অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে অনেক মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে, নদী তার নাব্য হারিয়েছে। অনেক সেতুতে ভাঙন ধরছে। অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলীন হয়েছে। মনে রাখতে হবে, যখন পরিবেশ রক্ষা পাবে, তখন মানুষ চিরচেনা প্রকৃতি ফিরে পাবে। দেশের প্রতিও তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। সরকার যেভাবে দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিয়েছে। তেমনিভাবে দেশের পরিবেশ, অবকাঠামো ও সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে অবৈধ দখলদার এবং বালু উত্তোলন করে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলা দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে। আর এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close