reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ধ্বংস করা সহজ গড়াটা কঠিন

সময়টা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের। হিরোশিমায় বোমা পড়ল। নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে গেল একটি শহর। প্রাণ গেল লক্ষাধিক মানুষের। অথচ এই শহর নির্মাণে কত শ্রম ও সময়ের জোগান ছিল তা আর নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অথচ তা ধ্বংস হয়েছিল মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে। অনেকের মতে, প্রতিটি ধ্বংসের মধ্যে লুকিয়ে আছে নতুন সৃষ্টির হাতছানি। একদিকে কথাটি সত্য হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে নয়। প্রতিটি ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির হাতছানি থাকে না। থাকে দুঃখ, কষ্ট এবং যন্ত্রণার বিভৎস পোর্ট্রেট। থাকে রক্তাক্ত ভবিষ্যৎ। নান্দনিক পৃথিবী হয়ে ওঠে কণ্টকাকীর্ণ, বাসের অযোগ্য এক আবাসভূমি। বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজকের পৃথিবীর দিকে তাকালে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্ভবত মানুষের সুখণ্ডশান্তি পাওয়ার নিশ্চয়তাকে নিশ্চিত করেই পৃথিবীর জন্ম। মানুষের প্রয়োজনে যা কিছু দরকার তার সবটুকুই এখানে রাখা হয়েছে। একটি অত্যাধুনিক জ্যামিতিক সূত্রে সৃষ্টিকর্তা তা নির্মাণ করেছেন। কোনো কারণে কোনো অংশে তার ঘাটতি হলে বিপর্যয় নেমে আসতে বাধ্য। আর এ বিপর্যয় ডেকে আনার পেছনে একমাত্র মানুষের কর্মকাণ্ডকেই দায়ী করা যায়। পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করার প্রশ্নে মানুষের অনৈতিক ভূমিকাই মুখ্য। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব, অতিরিক্ত মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতা এবং লোভনীয় কর্তৃত্ববাদের আকাঙ্ক্ষাকেই দায়ী করা হচ্ছে। কিছু পেতে হলে যে কিছু দিতে হয়, বিষয়টি কারো চিন্তার খতিয়ানে নেই। প্রকৃতি আমাদের দিয়েছে অনেক। প্রতিনিয়তই দিচ্ছে। বিনিময়ে মানুষ তাকে দেয়নি কিছুই। আবার নিতে গিয়ে শুধুই রক্তাক্ত করেছে পৃথিবীকে। একটু বেশি কিছু পাওয়ার প্রত্যাশায় মানুষের এই বেহিসেবি আচরণ। কিন্তু এ কথা ভুলে গেলে চলবে না, ‘প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমপ্রতিক্রিয়া আছে’। প্রকৃতি প্রতিক্রিয়া দেখালে তা মানুষের পক্ষে যে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বর্তমান ও অতীত হতিহাস তার সাক্ষী। তাই এটাই দেওয়ার শেষ সময়। মানুষের কাছে প্রকৃতির চাওয়ারও বেশি কিছু নেই। একটু ভালোবাসা পেলেই সে সন্তুষ্ট। সম্ভবত মানুষের কল্যাণেই তাকে সন্তুষ্ট করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

পশ্চিমে সূর্য হেলে পড়লেই ফিরতে থাকে পাখিরা। শুরু হয় তাদের কিচিরমিচির। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই শব্দের তীব্রতা বেড়ে যায়। পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে কলকাকলির নান্দনিক শব্দাবলি। অন্ধকার না হওয়া পর্যন্ত এই কলকাকলিতে আচ্ছন্ন হওয়ার মুহূর্তগুলো এখন আর নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদ ও কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের গাছগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। একই সঙ্গে রক্তাক্ত করা হয়েছে প্রকৃতিকে। বিভিন্ন প্রজাতির বহু বছরের পুরোনো বৃক্ষগুলোকে এখন আর দেখা যাবে না। এতে কর্তৃপক্ষের কিছু যায় আসে না। ধ্বংসের মধ্যে যারা আনন্দ খুঁজে পায়, দুঃখবোধ তাদের স্পর্শ করে না। তবে তাদের স্পর্শ না করলেও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তার খেসারত দিতে হবে।

খেসারত দিতে দিতে অবস্থা অনেকটাই বেহাল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হটস্পট হিসেবে বাংলাদেশ এখন একটি উদাহরণে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ- প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের বৈরী আচরণ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষনিধন করে শুধু পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্তই করেনি, একই সঙ্গে প্রকৃতির নান্দিকতাকেও ধ্বংস করেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিবেকবোধকেও আহত করেছে। আমরা মনে করি, কর্তৃপক্ষের বোধোদয় হোক। প্রকৃতিকে ভালোবাসা দিন, প্রকৃতিও তা দ্বিগুণ করে আপনাকে ফিরিয়ে দেবে। আমরা ফিরে পাব একটি নান্দনিক বাংলাদেশ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close