যুদ্ধ ডেকে আনে বিপর্যয় ভোগান্তিতে সাধারণ
বোধোদয় কবে হবে, জানা নেই। যুদ্ধ যে কল্যাণ ডেকে আনে না, আনে বিপর্যয়। এ কথা সবারই জানা। তার পরও যুদ্ধ চলছে। সম্ভবত পৃথিবী ধ্বংসের আগে এর থেকে মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। আর সে কারণে ভোগান্তি যা পোহানোর তা সাধারণকেই পোহাতে হচ্ছে এবং হবে। অনেকটা পানির চরিত্রের মতো বিপর্যয়ের চরিত্রও নিচের দিকে ধাবিত হওয়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের বয়স ৭ মাসও অতিক্রম করেনি। যুদ্ধ এখনো চলছে। বাহ্যিকভাবে মনে হতে পারে দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধটি সীমাবদ্ধ। কিন্তু তা নয়। প্রকৃত অর্থে এ যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় আক্রান্ত বিশ্ব। আক্রান্ত বিশ্বের ৭০০ কোটি মানুষ, যার অধিকাংশই সাধারণ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল এখনো সামনে আসেনি। তবে ফলাফল হিসেবে যা এসেছে তা হলো, বিশ্ব অর্থনীতি বিকলাঙ্গে পরিণত হয়েছে। পরিণতিতে মুদ্রা ও মূল্যস্ফীতিতে ধুঁকছে বিশ্ব মানবতা। ধুঁকছে খেটে খাওয়া মানুষের সংসার। বাংলাদেশও এর বাইরে থাকতে পারেনি। চাপ পড়েছে সর্বত্র। রাজধানী ঢাকায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করা একজনের মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে এখানে থাকেন। বাসাভাড়া বাবদ প্রতি মাসে দিতে হয় ১২ হাজার টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার খরচ, সন্তানদের পড়াশোনা আর অফিসে যাতায়াত। আগে এক রকম চলেছে। কিন্তু এখন আর চলতে চাইছে না। সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি সংকটসহ নানামুখী সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কম্পিউটার ইনজিনিয়ারের মতো দেশের নিম্ন-মধ্যবিত্তসহ বিত্তহীন মানুষ।
সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। ফলে গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় খাদ্যসহ সব ধরনের দামও বেড়েছে। এক হালি ডিমের দামই ৫৫ টাকা। সবাই আছেন টানাটানির মধ্যে। কারো কাছে হাত পাতাও যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় অনেকের জন্য টিকে থাকাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে কোভিড মহামারির ধাক্কায় গত দুই বছরে অনেক মধ্যবিত্ত চাকরি হারিয়েছেন। সবারই দুই বছর ধরে এক টাকাও বেতন বাড়েনি। ক্ষেত্রবিশেষ বেতন কমানো হয়েছে। মধ্যবিত্ত অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসা অর্ধেকে নেমে এসেছে। পুঁজি ভেঙে চলার কারণে এখন ব্যবসায়ে বিনিয়োগ বাড়াতে পারছেন না। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে রাখা সম্ভব হয়নি। ঠিক সে মুহূর্তে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে নেমে এলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খড়্গ। সবার সামনে এখন একটিই প্রশ্ন। এখান থেকে মুক্তির উপায় কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে সবকিছুই ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে। অর্থাৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজার পর্যন্ত দাম বাড়া অব্যাহত থাকবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে এই চাপ নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে মানুষ আর ভালো থাকতে পারে না। তাই এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো। ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুক্তির সোপান। আমাদের সে পথের সন্ধানে নামতে হবে। আর সরকার ও ব্যবসায়ীদের নিতে হবে দায়িত্ব। সাধারণ মানুষ বিপদে থাকলে অসাধারণ মানুষের বিপদও ঘনিয়ে আসবে। বিপদে পড়বে জাতি ও রাষ্ট্র, যা কখনোই আমাদের কাম্য নয়। আমরা আশা করি সরকার এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা দ্রুতই এর সমাধানে এগিয়ে আসবেন।
"