reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৭ আগস্ট, ২০২২

কর্মীদের অবহেলায় পাঁচ অপমৃত্যু

দায়িত্বহীনতা যে কত বড় সংকট তৈরি করতে পারে, তা সাম্প্রতিক একটি ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেল। উত্তরায় প্রাইভেট কারের ওপর গার্ডার পড়ে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একে আমরা কিছুতেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলতে পারি না। দুর্ঘটনাও বলা যাবে না। ইচ্ছাকৃত ঘটানো হয়েছে, এমনটাও নয়। তবে অনেকের মতে, এটি ছিল দায়িত্বহীনতা বা অবহেলার একটি ভয়ংকর খেসারত। কার আরোহীর মাঝে যে পাঁচজন মারা যান, তার মধ্যে দুজন শিশুও ছিল। দুই আরোহী বেঁচে থাকলেও তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গত ১৫ আগস্ট বিকাল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরার জসীম উদ্দীন রোড এলাকায় আড়ংয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ তথ্যমতে, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ফ্লাইওভারের বক্স গার্ডার ওঠানোর সময় ভারসাম্য রাখতে না পারায় বহনকারী ক্রেন একদিকে হেলে পড়ে এ মর্মান্তিক ঘটনার জন্ম দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বিআরটি প্রকল্পের জন্য নির্মিত গার্ডারটি একটি ক্রেনের সাহায্যে সরানো হচ্ছিল। এ সময় গার্ডারটি হঠাৎ করে রাস্তায় চলমান প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে। গার্ডারটি ক্রেন থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেনি, বরং ক্রেনের একপাশ উল্টে রাস্তায় নেমে আসে। তাদের মতে, ক্রেনটির ধারণক্ষমতা কম ছিল কিংবা ভুলভাবে অপারেট করা হয়েছে।

এখানে বাইরের কারো হাত থাকার কথা নয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা যে মন্তব্য করেছেন, তাকে অনেকটা সত্য বলে ধরা যেতে পারে। ত্রুটিবিচ্যুতি যা কিছু ছিল সবটাই ক্রেন এবং ক্রেন চালকের ওপরই বর্তাবে। এখানে যান্ত্রিক ত্রুটি একটি কারণ হতে পারে। অপরটি কার্যরত ক্রেন অপারেটরের দায়িত্বহীনতা। এ দুয়ের বাইরে আর কোনো কারণ থাকার সুযোগ নেই। সুতরাং এককথায় বলা যায়, দায়িত্বহীনতা মানুষকে কোথায় টেনে নামাতে পারে। যদি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ ঘটনা ঘটেও থাকে, সেখানেও একই কথা উঠে আসে। যারা ক্রেনটির দেখভালের কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তার তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের এই সামান্য অবহেলার কারণে পাঁচণ্ডপাঁচজনের অকালমৃত্যু ডেকে এনেছে। যে মৃত্যুকে কখনোই স্বাভাবিক বলা যাবে না।

বিআরটি-এর পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ঘটনার কারণ খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। তবে কারণ খুঁজে পেতে সময় লাগবে। সেতু ভবনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিআরটি প্রকল্পের কাজ বেশ কয়েকটি ধাপে চলছে। উত্তরা হাউসবিল্ডিং থেকে চেরাগ আলী পর্যন্ত সেতু বিভাগের আন্ডারে। আর হাউসবিল্ডিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক বিভাগের আওতায়। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, এলাকাটি কার আন্ডারে, তা দেখার সময় আমাদের নেই। আমরা দেখতে চাই, কি কারণে এবং কার অবহেলায় ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা সত্য জানতে আগ্রহী। কোনো ধরনের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য হবে না। এর আগেও একবার গত বছরের ১৪ মার্চ সকালে বিআরটি গার্ডার ভেঙে চারজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে দুজন বিদেশিও ছিলেন।

আমরা মনে করি, দায়িত্বে অবহেলা শুধু এখানেই প্রথম নয়। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অহরহই এ রকম ঘটনা ঘটছে। জবাবদিহির অভাবে তা আজ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। আমরা জবাবদিহিতায় বিশ্বাসী। সবকিছুকেই জবাবদিহির আওতায় আনতে না পারলে সংকট এক দিন মহাসংকটে পরিণত হবে; যা কখনোই কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য হতে পারে না। আমরা উত্তরার এ ঘটনার পরিসমাপ্তি ডিপ ফ্রিজে না গিয়ে জবাবদিহির একটি মাইলফলক হয়ে দাঁড়াক- এটুকুই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close