দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৭ আগস্ট, ২০২২

অভিমত

বাঙালি হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি

১৫ আগস্টের সেই কালরাতে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার মহানায়কের শাহাদতবরণের দিন যেমন শোকের, তেমন শোককে শক্তিতে পরিণত করারও। ১৫ আগস্টের ঘটনা ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল। ওই কালরাত থেকে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি জাতির ঘাড়ে চেপে আছে। ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘোরানোর চেষ্টাও চলে। স্বাধিকার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ফলে বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে এ দেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের যে কালো অধ্যায়ের সূচনা হয় তার পরিণতিতে জাতীয় রাজনীতিতে বারবার বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতিতত্ত্বের বিভেদ নীতিকে কবর দিয়েছিল। তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলে ১৫ আগস্টের পর থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৯৬ সালে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয় দেশবাসীর প্রত্যাশার পরিপূরক হিসেবে। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার এবং খুনিদের ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের বিদেশ থেকে আইনি পথে দেশে এনে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টাও চলছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির হৃদয় থেকে তার আদর্শ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলেছিল। বিবেক বিক্রেতা খুনিদের সে অপচেষ্টা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার অপরাজেয় আদর্শ টিকে আছে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।

বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবনে একটিই ব্রত ছিল- বাংলা ও বাঙালির মুক্তির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। এর শুরু ১৯৪৮ সাল থেকে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, এই রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে আমরা বাঙালিরা নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হব। তাই এ থেকে জনগণের মুক্তির জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামের পথ। ১৯৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মহান ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৫৬-এর শাসনতন্ত্রের জন্য আন্দোলন, ৬২-এর ১৭ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৩-এর রবীন্দ্রচর্চা আন্দোলন, ৬৪-এর সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়- প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর ছিল বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। বাংলাদেশ ও বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন আর স্বৈরশাসকের রক্তচক্ষু ছিল বঙ্গবন্ধুর নিত্যসঙ্গী। তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বহুবার। একাধিকবার ফাঁসির মঞ্চ তৈরি হয়েছিল তার জন্য। বাঙালির প্রতি তার বিশ্বাস ও আস্থা ছিল আকাশচুম্বী। সেজন্যই হাসিমুখে, নির্ভীকচিত্তে মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সব ধরনের জুলুমণ্ডনির্যাতন বরণ করেছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন কাম্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশ ও জাতির সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে তার আপন মহিমায় প্রতিস্থাপন করা হলে জাতি হিসেবে সবাই গৌরবান্বিত হবে। আমৃত্যু একটি গণতান্ত্রিক, প্রগতিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের যথাযথ রূপায়ণই হবে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সর্বোত্তম উপায়।

বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম দিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এ বাংলাদেশ। আর যত দিন বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি দেশ থাকবে; তত দিন এ দেশের প্রত্যেক মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব, চির অম্লান হয়ে বাঙালি চেতনার এক অনির্বাণ শিখা হিসেবে প্রজ্বালিত হয়ে থাকবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের শত্রুরা তাকে হত্যা করে দেশকে নরকে পরিণত করেছিল। আল্লাহর রহমতে তার সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করেছে তার জাদুকরী নেতৃত্বে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close