reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ আগস্ট, ২০২২

অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে ডলফিন

ভোগবাদী চিন্তার চরমতম অনুশীলন সমাজে তৈরি করছে অনৈতিকতার অভয়ারণ্য। একদিকে বাড়ছে ভোগের সামগ্রী, বাড়ছে ভোগবাদীর সংখ্যা। হারিয়ে যাচ্ছে নান্দনিক বোধ। ধ্বংস হচ্ছে সমাজ ও প্রকৃতি। বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে পৃথিবীতে এই চরমতম ভোগবাদীদের সংখ্যা তুলনামূলক বিচারে খুবই নগণ্য হলেও ক্ষমতা এবং দাপট সীমাহীন। পৃথিবীর দুই-তৃতীয়াংশ সম্পদের মালিকানা এদের এক্তিয়ারে। তাতেও এদের চাহিদার শেষ নেই। এখানেও যদি এদের চলা এবং বিকশিত হওয়ার গতি থামত, প্রকৃতি ও বৃহৎ বিশ্ব মানব সম্প্রদায় নান্দনিক পৃথিবীতে বসবাস করার কিছুটা হলেও সুযোগ পেত। কিন্তু না! তা হচ্ছে না। আর সে কারণেই ধ্বংসের পথে এগিয়ে চলেছে সভ্যতা।

‘হালদায় মরছে ডলফিন’। এটি ছিল পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ শিরোনাম। সংবাদে বলা হয়, প্রায়ই হালদা নদীতে পাওয়া যাচ্ছে মৃত ডলফিন। তাই হালদার বাস্তুতন্ত্র নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা। পরিসংখ্যান বলছে, গত সাড়ে চার বছরে হালদায় ৩৮টি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ মাসে ১৮টি ডলফিন মৃত পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ১০টি মৃত ডলফিনের সন্ধান পাওয়া যায়। ২০২১ ও ২০২২ সালে ৫টি করে মৃত ডলফিন শনাক্ত করে কর্তৃপক্ষ।

এতো গেল সরকারি হিসাব। এর বাইরের খবর আমরা রাখি না বা জানি না। বাইরেরটা জানলে সংখ্যা যে আরো বাড়তে পারে সে ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। আমরা আমাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কথা মনে না রাখলেও প্রকৃতির নড়েচড়ে বসার মধ্যদিয়ে তা টের পাওয়া যায়। আমরা জানি, ডলফিন একটি নদীর জলজ বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সূচক। নদীতে ডলফিনের সংখ্যা বেড়ে গেলে নদীর বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে বিবেচনা করা হয়। তেমনি এটি কমে যাওয়া নদীর জন্য অশনি সংকেত। হালদা নদী বাংলাদেশের স্বাদুপানির মাছের একটিগুরুত্বপূর্ণ জলজ বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তু তন্ত্রে রয়েছে ৮৩ প্রজাতির ফিনফিশ, ১০ প্রজাতির শেলফিশ, গাঙ্গেয় ডলফিন এবং অন্যান্য জলজপ্রাণী।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই মৃত্যু! জীব বিশেষজ্ঞদের মতে, সারা বিশ্বে ডলফিন মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে কারেন্ট জাল। ডলফিন চলাচলের সময় জালের অবস্থান প্রতিধ্বণির মাধ্যমে নির্ণয় করতে পারে না। যার কারণে সহজে জালে জড়িয়ে পড়ে। হালদায় ডলফিন মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে অবৈধভাবে মাছ ধরার জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের জাল। এ ছাড়াও রয়েছে দূষণ, পানির গুণাবলীর পরিবর্তন, খাদ্যের অভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনের পার্শ-প্রতিক্রিয়া। তাহলে দাঁড়ালোটা কী? ভোগবাদী মানুষের আগ্রাসী অনৈতিক আচরণ জীববৈচিত্র্যকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যাদের ওপরে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অর্পিত আছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এর বাইরে আছে দায়িত্ব পালনে অবহেলা।

আবারও প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে উপায়! বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া অন্যান্য প্রাণীর মতো ডলফিনও কী হারিয়ে যাবে? জবাবে বলতে হয়, প্রথমত, চরমতম ভোগবাদী চিন্তা থেকে নিজেদের সরিয়ে আনতে হবে। ভালো কিছু করার জন্য ত্যাগের মানসিকতায় নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। এসব হচ্ছে মানসিক প্রস্তুতি। তারপর পানিতে নেমে দেখতে হবে জাল ব্যবহারে আমরা কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করব, নদীকে তার মতো চলতে দেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করব, ইঞ্জিনচালিত জলযানকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করব! প্রশ্ন হচ্ছে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা পরাবে কে? কাউকে না কাউকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা আশাবাদী, তিনি আসবেন এবং সংস্কার কাজে হাত লাগাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close