রপ্তানিতে কাঁকড়ার চাহিদা ইতিবাচক
পৃথিবী এখন যে পথে হাঁটছে, তাতে বেঁচে থাকাটাই কঠিন হয়ে পড়ছে। চারপাশে শুধু যুদ্ধের দামামা। যুদ্ধ পারমাণবিক পর্যায়ে হোক বা না হোক, যে যুদ্ধ চলছে তাতে পারমাণবিক যুদ্ধের ফলাফলের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ কোনো অংশে কম হবে বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় পুড়ছে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র। উত্তপ্ত রাজনীতি। চারদিকে মারমার কাটকাট রব। বিপরীতে অর্থনীতি। জমাট বরফের দিকে যেন গতি তার। বেঁচে থাকার চিন্তায় উদ্বিগ্ন বিশ্ব মানব সম্প্রদায়। অর্থনীতির প্রতিটি সূচকই যেন নিম্নমুখী। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর দিকে তাকালে মেঘের ঘনঘটা। এর পরও মানুষ আশাবাদী। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে চলছে প্রস্তুতি। আর এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রথম অস্ত্রের নাম কৃষিপণ্য। অর্থাৎ খাদ্যপণ্য উৎপাদনই একমাত্র ভরসা। বাংলাদেশের জন্য প্রকৃতিই সে সুযোগ তৈরি করে রেখেছে। প্রয়োজন একটি নান্দনিক সমন্বয়।
দেশের রপ্তানি তালিকায় আরো একটি সাফল্য যুক্ত হয়েছে। মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী কাঁকড়া এখন সোনার হরিণ। বর্তমানে ঢাকায় এক কেজি বড় কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা বাড়ছে। বিশেষ করে কক্সবাজারে উৎপাদিত কাঁকড়ার প্রতি সবার বিশেষ আকর্ষণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁকড়া ব্যবসায়ে সুদিন ফিরছে। এখানে বলে রাখা ভালো, এই সুদিনকে আন্তরিকভাবে ধরে রাখার ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করাই রাষ্ট্র এবং জাতির দায়িত্ব। কোনোভাবেই অবহেলা কাম্য নয়। এক একটি কাঁকড়া এক একটি ডলার হতে পারে- এই কথা মাথায় রেখে প্রকৃতি যা দু’হাতে তুলে দিয়েছে তাকে যত্নের সঙ্গে লালন করা সরকার ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মনে রাখতে হবে, আমরা এখনো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। আগামী দিনের ভয়াবহ খাদ্য পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া কতটা জরুরি হয়ে পড়েছে, চলমান খাদ্য সংকট তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সুতরাং; সময় থাকতে সাবধান হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন চিংড়ি প্রজেক্টে মৌসুমি কাঁকড়া চাষ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন নদী ও মহেশখালী চ্যানেল থেকে প্রচুর কাঁকড়া আহরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জেলাব্যাপী দেড় শতাধিক কাঁকড়া হ্যাচারি রয়েছে। তথ্য বলছে, বড় একটি কাঁকড়ার মূল্য হাজার টাকারও বেশি। তাই একে আমরা সোনার খনির সঙ্গে তুলনা করতে পারি। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যেতে পারলে এই খাত থেকে একটি বড় মাপের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যা আগামী দিনে বেঁচে থাকার প্রশ্নে সহায়ক হতে পারে।
তথ্য মতে, এই খাতের উৎপাদনকারীরা মূলত রপ্তানিকারকদের ওপর নির্ভরশীল। অনেকাংশে জিম্মি বলা যেতে পারে। রপ্তানিকারকদের ওপরই নির্ভর করে কাঁকড়ার দর। ফলে তৃণমূলের উৎপদনকারীরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা এই সম্ভাবনাময় কাঁকড়া খাতকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমন্বয় হওয়াটা খুবই জরুরি এবং সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে এটুকু আশা করতেই পারি- দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সরকার আমাদের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে আসবে।
"