reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৮ আগস্ট, ২০২২

এক অনুসরণীয় জীবনাদর্শের প্রতীক

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় সহধর্মিণী। জাতির পিতার প্রায় সব অর্জনের নেপথ্যে ছিলেন তিনি। আমৃত্যু নেপথ্যে থেকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধুকে আগলে রেখেছিলেন। অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের মানুষ এই মহান নারীর নিজস্ব সচেতনতা, বাস্তবতা বোধ এবং চিন্তাচেতনায় সময়কে উপলব্ধি করার অসম্ভব ক্ষমতা ছিল। স্বামী ও সন্তানের জন্য ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেছেন। এটা সব বাঙালি নারীর চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। কিন্তু তিনি তার কষ্টসহিষ্ণু আত্মত্যাগের কাহিনি নিজের বাড়ির সীমানা পেরোতে দেননি কখনো। এ কারণেই তিনি মহীয়সী। শেষ পর্যন্ত এ দেশের জন্য নিজের জীবনকেও বিলিয়ে দিয়েছেন। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে একজন দেশপ্রেমিক বীর নারীযোদ্ধা। তিনি লড়াই করেছেন নিরলসভাবে। কারারুদ্ধ স্বামীকে বারবার সাহস জুগিয়েছেন বাঙালির মুক্তির আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে। প্রেরণা দিয়েছেন নিজের আত্মজীবনী লিখতে। পাকিস্তান আমলে তার স্বামী মন্ত্রী ছিলেন, এমপি বা এমএলএ ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার লেখায় উল্লেখ করেছেন বঙ্গমাতা জীবনে এক দিনও করাচিতে যাননি, কোনো দিন যেতেও চাননি। স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে তিনি বিলাসী জীবনযাপনও করেননি। ধানমন্ডির বাড়িতে থেকেছেন। জীবনের চলার পথে সীমাবদ্ধতা থাকা বা সীমিতভাবে চলা সবকিছুতে সংযতভাবে চলা শিখিয়েছেন সন্তানদের। বরং জীবনে যেভাবে চলা উচিত, ঠিক সেভাবেই তিনি চলেছেন। আগরতলা মামলায় অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান ছিল মৃত্যুদণ্ড, তখনো সামরিক শাসকের কোনো আপস প্রস্তাবে স্বামীকে রাজি হতে দেননি বেগম ফজিলাতুন নেছা। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের মুখে যখন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব রাওয়ালপি-িতে রাজনৈতিক নেতাদের গোলটেবিল বৈঠক ডেকে তাতে বঙ্গবন্ধুকে যোগ দিতে প্যারোলে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের অনেক প্রবীণ নেতা রাজি হলেও তিনি রাজি হননি। তিনি চাননি গণমুক্তির অধিনায়কের মাথা সামরিক শাসকের কাছে নত হোক। তার পরামর্শেই বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি পেতে অসম্মতি জানান। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধেও বেগম মুজিবের অবদান কম নয়। তিনি পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে বন্দি থেকেও দুই ছেলে শেখ কামাল ও শেখ জামালকে যুদ্ধে পাঠাতে দ্বিধা করেননি। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন। তারই সঙ্গে জীবন দিয়েছেন। সংকটে নির্ভীক বঙ্গমাতা এক অনুসরণীয় জীবনাদর্শের প্রতীক।

আগস্ট মাস আমাদের কান্নার মাস। এ মাসে আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে। দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমাদের সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহেনা। ভাবলে অবাক লাগে এ মাসে বেগম মুজিব এলেন, আবার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে চলে গেলেন। এ মহীয়সী নারীর অবদানের কথা লিখতে গেলে লেখা আর শেষ হবে না। যে স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা আজ বসবাস করি, যে স্বাধীন বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মাথা উঁচিয়ে বিশ্বের দরবারে আজ সম্মানের সঙ্গে আসন পেতেছে, সেই বাংলাদেশের জন্মই হতো না, যদি বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা রেণু সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর পাশে এসে না দাঁড়াতেন। আজ এই মহীয়সী নারীর ৯২তম শুভ জন্মবার্ষিকী। তার অমর স্মৃতির প্রতি রইল আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close