reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৬ আগস্ট, ২০২২

আকারের সঙ্গে সংখ্যার সামঞ্জস্য প্রয়োজন

ব্যাংককেই অর্থনীতির ধারক ও বাহক বলা হয়ে থাকে। দেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো ব্যাংকিং। এ খাত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বড় চালিকাশক্তি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা ৬১। এরমধ্যে বিদেশি ব্যাংকের সংখ্যা ৯। তিনটি বিশেষায়িত ব্যাংকসহ দেশে মোট ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক আছে। বাকি ৪৩টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে।

২০১৯-২০ সালের বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডের মতো উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর ব্যাংকিং কাঠামোর চিত্র বাংলাদেশের বিপরীত। থাইল্যান্ডের জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু দেশটিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেশি ব্যাংকের সংখ্যা ১৮। সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার জিডিপির আকার ৩৪০ ও ৩৩৭ বিলিয়ন ডলার এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেশি ব্যাংকের সংখ্যা ৫ ও ৮। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশের অর্থনীতির আকার ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। উন্নত ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো জিডিপির আকারের তুলনায় নিজস্ব ব্যাংকের সংখ্যা বাড়েনি। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর সংখ্যা বেশি এবং একই সঙ্গে সক্ষমতা ও উন্নতি অনেকাংশে কম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর নিজস্ব ব্যাংকের সংখ্যা কম হলে ও বিদেশি ব্যাংকগুলোকে তাদের শক্তিশালী অর্থনীতি প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে চলছে।

সাধারণত কোন দেশ অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটলে সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করতে ছুটে যায় বিদেশি ব্যাংকগুলো। এক দশক ধরে জিডিপির শক্ত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি ঘটছে না। সাধারণত যে দেশের অর্থনীতি যত বেশি সুসংহত, সে দেশে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা ব্যাংকের সংখ্যা তত কম হয়ে থাকে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, উদীয়মান অর্থনীতিতে জিডিপির প্রবৃদ্ধির চেয়ে ব্যাংকের সম্পদ বৃদ্ধি হয় অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে ব্যাংক খাতের সম্পদ তেমন বড় নয়। দেশের ব্যাংক খাতের সম্পদ বা ঋণের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ অনুৎপাদনশীল। খেলাপি হয়ে পড়া এ সম্পদ থেকে রিটার্ন পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকিং নীতি কাঠামোর সংস্কার কিংবা নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কার। যেসব ব্যাংকের অর্থনীতিতে পরিসম্পদ সৃষ্টি করার সক্ষমতা নেই, মার্জার-অ্যাকুইজিশনের মাধ্যমে এর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী ব্যাংক খাতে চলছে রূপান্তর। এই খাতের স্থায়িত্বশীলতা নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঙ্গে অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর। ব্যাংকগুলোর সাফল্যের জন্য প্রয়োজন দক্ষ জনবল, প্রযুক্তিগত স্থায়িত্বশীলতা, টেকসই ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, সুদক্ষ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, সময়োপযোগী নীতি কাঠামো, পণ্যবৈচিত্র্য, পেশাদারি গ্রাহকসেবা নিশ্চিতসহ সার্বিক সক্ষমতার উন্নয়ন। বাংলাদেশকে মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে ব্যাংকিং খাতের বিশ্বমান অর্জন করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি করতে পারে ব্যাংকিং খাত, সেই জন্য প্রয়োজন এই খাতের নবায়ন। ব্যাংকিং খাতে বিশ্বমান অর্জন না হলে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ আরো ব্যয়বহুল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বেশি। গতানুগতিক ব্যাংকিং সেবা গ্রাহক আকর্ষণের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই বাংলাদেশকে মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুফল অর্জন করতে হলে ব্যাংকিং খাতের নবায়ন নিশ্চিত করাটাই আজ সময়ের দাবি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই বিষয়টি ভেবে দেখবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close