reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৫ আগস্ট, ২০২২

চাঁদাবাজির মহোৎসব আসমানি পরিবহনে

সমাজ ও রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি যে অর্থনীতি, বিষয়টি সবারই জানা। যে কোনো জিনিসের গতি-প্রকৃতি যে তার চরিত্রের ওপর নির্ভর করে, এটিও অজানা নয়। তবে মানুষ যখন জেনেও না জানার ভান করে তখন তা ভন্ডামির নামান্তর ছাড়া আর কিছু নয়। সমাজে যখন এই ভন্ডের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন সমাজ ব্যবস্থার মেরুদন্ডও দুর্বল হতে থাকে। যে কোনো সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। মোটা দাগে আমাদের অর্থনীতিতে দুটি ধারার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যার একটি জাতীয় পুঁজি আর অপরটি লুটেরা পুঁজি। অনেকের মতে, জাতীয় পুঁজির চেয়ে লুটেরা পুঁজিই শক্তিশালী। ক্ষমতাও অনেক। যত্রতত্র এর বহিঃপ্রকাশও চোখে পড়ে। ডেমরার আসমানি পরিবহনের চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে আবারও সে কথাই প্রমাণ করল।

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, রাজধানীর ডেমরা রুটে চলা আসমানি পরিবহনের ৬৫টি বাস থেকে প্রতি মাসে ২৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়েছেন ওই পরিবহনের সব চালক ও সাধারণ মালিক। বলে রাখা ভালো, এই সাধারণ মালিকরাই জাতীয় পুঁজির ধারক ও বাহক। আসমানি পরিবহনের খোদ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগনামা। তথ্য মতে, ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে ভ্রাতৃদ্বয় জিম্মি করে রেখেছেন চালক ও বাস মালিকদের। এখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার ভাই লুটেরা পুঁজির ধারক। এক পক্ষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জাতীয় পুঁজির লালন ও সংরক্ষণ আর বিপরীতে লুটেরা চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ।

বাস মালিক পক্ষের অভিযোগ, তারা প্রাপ্য অর্থ পাওয়া থেকে সবসময়ই বঞ্চিত হয়ে অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা নানাভাবে প্রতিবাদ করেও এর কোনো প্রতিকার পাননি। পাওয়ার কথাও নয়। দেশের অর্থনীতি যখন লুটেরা পুঁজির একচেটিয়া দখলে থাকবে তখন জাতীয় পুঁজির মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার পথ অবরুদ্ধ থাকবে- এটাই অর্থনীতির বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। এদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল এবং কিছু সাংবাদিককে ম্যানেজ করা এবং পয়েন্টভিত্তিক লোকজন নিয়ন্ত্রণে রাখাসহ নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করে আসমানি পরিবহন সেক্টরকে নিরাপদে রাখতেই এ পথে নামতে হয়েছে।

যুক্তিতে কোনো খাদ নেই। খাদ অন্যত্র। সরিসার ভেতরেই যখন ভূতের আবাস তখন সেই সরিসা দিয়ে ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। বাস্তবতা বলছে, ব্যবস্থাপনার প্রতিটি স্তরেই ভূতের উপস্থিতি। যেখানে ভূতের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে লুট করা, সেখানে ক্ষমতা ও শক্তিমত্তায় পিছিয়ে থাকা জাতীয় পুঁজির ধারক ও বাহকদের সমস্যা তো থাকবেই। তাহলে উপায়! উপায় একটিই। ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে জাতীয় পুঁজির অনুকূলে রেখে প্রয়োজন হবে ক্ষমতা ও শক্তিবৃদ্ধির। যত সহজে বলা গেল, কর্মটি অতটা সহজ নয়। বলা যায় ভয়াবহ কঠিন। তবে কাউকে না কাউকে এগিয়ে এসে হাল ধরতে হবে। মনে রাখতে হবে, জাতীয় পুঁজি বিকশিত না হলে অর্থনীতি বিকশিত হওয়ার পথও রুদ্ধ হয়ে থাকবে। অর্থপাচারের পরিমাণ ও পাচারকারীদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে, যা কখনোই একজন দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাম্য হতে পারে না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close