reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ আগস্ট, ২০২২

দুর্নীতি ও মাদক যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ

মাদকের কথা মনে পড়লেই নেশাগ্রস্ত মানুষের কথা মনে পড়ে। নেশার প্রতি আসক্ত মাদকসেবীদের কুপ্রবৃত্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। আসলে অসংখ্য কুপ্রবৃত্তির মধ্যে একটি হলো মাদক। পাশাপাশি আরো একটি আছে। যার নাম দুর্নীতি। ক্ষেত্রবিশেষ মাদকের চেয়ে ভয়ংকর রূপে আবির্ভূত হয় এই দুর্নীতি। এ দুয়ের ক্ষমতার কথা সবারই জানা। এক কথায় এরা অপ্রতিরোধ্য। অনেকের মতে, দুটিই বিলাসিতার নামান্তর। বিলাসিতা করার জন্য দরকার সম্পদের মালিকানা, যা এ দুয়ের মধ্যে বিদ্যমান। সমাজে আজ যারা বিত্তবৈভবের মালিক তাদের বেশির ভাগই ন্যূনতম এ দুয়ের একটির অথবা উভয়ের ঘনিষ্ঠ বান্ধব। অর্থাৎ যেখানে দুর্নীতি, সেখানেই আসক্তি, আবার যেখানে আসক্তি, সেখানেই মাদক। কারো কারো মতে, এরা যমজ, আবার কেউ বলছেন এরা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। যে যেভাবেই সঙ্গায়িত করুন না কেন, স্বীকৃত সত্য হলো এরা সামাজিক ক্যানসার। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ এই ক্যানসারে আক্রান্ত। এ দুয়ের ওপর সরকারের নজরদারিও কঠোর। জিরো টলারেন্স অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই যেন ক্যানসার সারার কোনো লক্ষণ নেই। বরং দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের আনাচে-কানাচে। তারই প্রতিফলন উঠে এসেছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে। সংবাদে বলা হয়, দেশে অপ্রচলিত নতুন ৬ মাদক জব্দ করেছে র‌্যাব। বিদেশ থেকে পার্সেলের মাধ্যমে আনা হতো এই মাদক। যেগুলোর নাম : এক্সট্যাসি, হেম্প, মলি, অ্যাডারল ও ফেন্টানিল। এ ছাড়া রয়েছে তাপনিয়ন্ত্রণ গ্রো-টেন্টের মাধ্যমে অভিনব পন্থায় তৈরি মাদক ‘কুশ’। কর্মটির সঙ্গে যুক্ত এক উচ্চশিক্ষিত যুবক ওনাইসি সাইদ। তার প্রবৃত্তির মধ্যে কুণ্ডএর প্রভাব ছিল প্রখর। তিনি তার ইচ্ছার কথা বলতে গিয়ে ভবিষ্যতে মাদকবিজ্ঞানী হওয়ার বাসনার কথা বলেছেন।

‘চমৎকার! ধরা যাক দু-একটি ইঁদুর এবার...’। এটি জীবনানন্দ দাশের একটি বিখ্যাত কবিতার অংশবিশেষ। তিনি শেষ পর্যন্ত ইঁদুর ধরায় সক্ষম হয়েছিলেন কি না, এ নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তবে, ওনাইসি সাইদ শুরুতেই হোঁচট খেয়েছেন। ঘাবড়ানোরও কিছু নেই। সম্ভবত এতে তিনিও ঘাবড়ে যাবেন না- যদি দেশের বাস্তবতা জানা থাকে। শিক্ষিত যুবক বলে কথা! ভালো করেই জানেন, দুর্নীতি চলছে জিরো টলারেন্সের রেলে। মাদকের অবস্থাও তাই। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। যেকোনো সময় রিসার্চের কাজ শুরু করতে পারবেন বলেই সমাজ বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

র‌্যাব জানিয়েছে, বিভিন্ন অপ্রচলিত ও নতুন মাদক বিক্রি এবং তাপনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে কুশ তৈরি করতেন এই যুবক। মাদক নিয়ে তার কারবার এবং গবেষণা। ভবিষ্যতে দেশের বাইরেও কুশ রপ্তানির পরিকল্পনাও ছিল তার। এজন্য বাসাতেই কুশ প্লান্টের ফার্ম তেরি করেন তিনি। ফ্ল্যাটের ভেতরেই তাপনিয়ন্ত্রিত গ্রো-টেন্ট পদ্ধতিতে চাষ শুরু করেন। তবে, ওনাইসি নিজে মাদক সেবন করেন না। এটাই স্বাভাবিক। কারণ ওনাইসি জানতেন মাদকসেবীদের পক্ষে কখনো বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব নয়। সব মাদকই মস্তিষ্কের স্নায়ূতন্ত্রকে ধ্বংস করে। জেনে শুনেই সেবন থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন।

বিজ্ঞানী হওয়ার প্রবণতা সব সময়ই ইতিবাচক। তবে, যদি তা মানবকল্যাণের পথে নিবেদিত থাকে। এ ক্ষেত্রে ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন। পাশাপাশি র‌্যারেব ভূমিকা প্রশংসনীয়। শুরুতেই মূলোৎপাটনে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এই মহৎ কর্ম কী এই যুবকের অগ্রযাত্রকে থামাতে সক্ষম হবে! এ ঘটনার মধ্য দিয়ে ঘরের উঠোনেই বিষবৃক্ষের জন্মলাভ করতে দেখল। আমরা আশা করব, শুরুতেই যেন এই বিষবৃক্ষ সমূলে উৎপাটিত হয়- এটিই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close