reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৩ আগস্ট, ২০২২

দাদনের হাত থেকে মুক্তি মিলবে কবে

না মিলবে না। এটি অভিজ্ঞতালব্ধ কথন। জন্ম সম্ভবত কয়েক শ বছর। তর্ক সাপেক্ষে আরো বেশি। জন্ম যখনই হোক, এখনো অমর। দাদনের শিকলে আটকে আছে বিভিন্ন পেশার অসংখ্য মানুষ। সবাই হতদরিদ্র। ছোট ছোট পেশায় নিয়োজিত থেকে বেঁচে থাকা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দারিদ্র্যের কশাঘাতে দাদনের শিকলে বাঁধা এদের হাত। দাদনের কারণে এদের শিরদাঁড়া কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশ কৃষি খাতে এর প্রভাব সব সময়ই মাত্রাতিরিক্ত। এখনো আছে। আধা পুঁজি-আধা সামন্তবাদী সমাজব্যবস্থায় এর শেষ কোথায় তা আমাদের জানা নেই। তবে, এই দাদন প্রক্রিয়া যে সমাজে শ্রেণি-বৈষম্যকে দিন দিন আরো তীব্রতর করছে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

এদের মধ্যে মাছ শিকারিরা আজ অনেকটা বেহাল অবস্থায় দিন পার করছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, দাদনের জাঁতাকলে পড়ে বরগুনার আমতলীসহ উপকূলীয় অঞ্চলের মাছ শিকারিরা ন্যায্য উৎপাদন করেও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম শেষে এক ঝাঁকা অভাবের পসরা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে সংসারে। এ চিত্র নিত্যদিনের। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ ছিল না, এখনো নেই। তাই শেষমেশ তারা শরণাপন্ন হয়েছেন সরকারের। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মিদশা ও দাদনের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে সরকারি সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

তথ্য মতে, তালতলী উপজেলায় ১৪ হাজার ৬১০ মৎস্য শিকারির বাস। বংশ পরম্পরায় তারা এ পেশা ধরে রেখেছেন। সারা বছর মাছ শিকার করেই চলে তাদের সংসার। গভীর সাগরে, সাগরের কিনারে এবং সাগরের শাখা-প্রশাখা নদী ও খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। মাছ ধরা না পড়লে উনুনে পাতিল ওঠানো দায় হয়ে পড়ে, ধরা পড়লে বেশির ভাগ চলে যায় দাদনশালায়। উনুনে আলো না জ্বললে শিক্ষার আলো যে জ্বলবে না- এটাই স্বাভাবিক। এদের বেলাতেও তার ব্যত্যয় হয়নি। জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে শিক্ষা নেই বললেই চলে। ফলে দাদন ব্যবসায়ীদের পেতে রাখা ফাঁদে অতি সহজেই তারা ধরা পড়েন। জাল, নৌকা ও ট্রলার তৈরিতে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকায় বাধ্য হয়ে দাদন ব্যবসায়ীদের দ্বারস্থ হতে হয় এসব মৎস্য শিকারিকে। দ্বারস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন শুরু হয় দাসত্বের জীবন। দাদনের টাকা যেন শোধ হওয়ার নয়। চক্রবৃদ্ধি হারে শুধু বাড়তেই থাকে।

ইলিশের ভরা মৌসুম আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন। এই চার মাসে চলে দাদন ব্যবসায়ীদের রমরমা দাদন বাণিজ্য। মাছ ধরা পড়লেই ফুরফুরে মেজাজ। জেলেদের সংসার চলুক আর না চলুক ব্যবসায়ীদের ঘরে বিজলি বাতির হাতছানি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইলিশের দাম কমিয়ে জেলেদের দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে দাদনের টাকা ফেরত দেওয়ার চাপ নেমে আসে। যদিও মাছের দাম আগেই নির্ধারণ করে দেন ব্যবসায়ীরা। তথ্য মতে, দাদনের টাকা গ্রহণ করেননি এমন একজন জেলেও এলাকায় নেই। এখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ কী খোলা নেই? এদের ঘরে কী কখনোই আলো জ্বলবে না! আমরা মনে করি, দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া যখন সর্বত্রই, তখন ছোট্ট এই পরিসর সেই ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে কেন? সরকার নিশ্চয়ই এখানে সু-দৃষ্টি দেবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close