reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৪ জুলাই, ২০২২

আরো একটি সফলতা কর্ণফুলী টানেল

পদ্মা সেতু চমকের রেশ এখনো কাটেনি। একটি সেতু যে একটি দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশকে এতটা আন্দোলিত করতে পারে, তা পদ্মা সেতুর সফলযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারলে অজ্ঞাতই থেকে যেত। আজ আমাদের দিব্যদৃষ্টির দরজা যেন খুলে দিল এই পদ্মা সেতু। বাংলাদেশের উন্নয়নের মুকুটে যেন যুক্ত হলো নতুন একটি সোনার পালক। কিছুদিন পর আসছে আরো একটি পালক ‘পাতাল রেল’। তবে পাতাল রেলের আগেই এ দেশের মানুষের জন্য উপহার হিসেবে আসছে আরো একটি সুসংবাদ। তথ্য মতে, টানেল যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’। আর মাত্র ১৭ শতাংশ কাজ বাকি। পদ্মা সেতুর পর দেশের উন্নয়ন স্মারকে আরো একটি পালক এই টানেল।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই টানেলের কাজ শেষ হওয়ার কথা। টানেলটি নির্মিত হলে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের গুরুত্ব ও মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পাবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। জাতীয় উন্নয়নে যোগাযোগ পরিকাঠামোর উন্নয়ন একটি অপরিহার্য অংশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা অনেক দেশের চোখে তা একটি বিস্ময়। শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়ে এসব পরিকাঠামোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নে শ্রমঘণ্টা সাশ্রয়ে অর্থনীতির চাকাকে কতটা গতিশীল করতে পারে যমুনার ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু এবং পদ্মা সেতু তার উদাহরণ তৈরি করেছে। এবার কর্ণফুলী টানেল আরো একটি উপমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলেই বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

টানেলের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটন শহর কক্সবাজার। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছে এ টানেল হওয়ার কারণে পূর্ণ প্রাণ ফিরে পাবে পর্যটন-বাণিজ্য। পর্যটকরা সরাসরি এ টানেল ব্যবহার করে চলে যাবেন কক্সবাজার- বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে। বিমানবন্দর ও টানেলকে যুক্ত করা হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে। ফলে পর্যটকরা অনেক সহজে টানেলের ভেতর দিয়ে যেতে পারবেন পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। আমরা মনে করি, পর্যটনশিল্পের জন্য এই টানেল হবে একটি যুগান্তকারী সংযোজন।

তথ্য মতে, কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের স্বপ্ন ছিল অনেক দিনের। এটি আদৌ সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন থাকলেও শেষ পর্যন্ত টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়। বাংলাদেশ মূলত চীনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এটি নির্মাণে পা বাড়ায়। চীন সরকার কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ সম্ভব বলে ছাড়পত্র দিলে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অতঃপর টানেল নির্মাণে চীনা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত নকশা ও অন্যান্য কাজ শেষে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা প্রান্ত থেকে টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম টানেল। ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চলতি সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে প্রায় ৮৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করতেই পারি, এই টানেল চট্টগ্রাম মহানগরের যানজট কমিয়ে, শ্রমঘণ্টার অপচয় রোধ করে শহরকে নান্দনিক করে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে এবং পর্যটনশিল্পকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়। আর এটাই দেশবাসীর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন এবং প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close