এহসান বিন মুজাহির

  ০১ জুলাই, ২০২২

এক নজরে

ইসলামে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব

মুসলমানদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এ সম্পর্কের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ভের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইসলামের অপরিহার্য বিধান উপেক্ষা করে মুসলিম জাতি আজ শতধাবিভক্ত। অথচ মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বিশ্বের তাগুতি শক্তিগুলো আজ এক প্ল্যাটফরমে। কিন্তু মুসলিম উম্মাহ আজ পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ, নিন্দাবাদের ঘৃণ্য স্লোগান ও কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত। ব্যক্তিস্বার্থ, ক্ষমতালিপ্সা পরিহার করে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে এক প্ল্যাটফরমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। সংঘবদ্ধের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী জাতি গঠনসহ, ইসলাম ও রাষ্ট্রের অসামান্য অবদান রাখা সম্ভব। ভেদাভেদ, অনৈক্য, ফিরকা ইত্যাদি ভুলে গিয়ে ইস্পাত কঠিন ভ্রাতৃত্ববন্ধন গড়াই কোরআন ও হাদিসের শিক্ষা। ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহ এবং তার রাসুল (সা.)-এর জোর তাগিদ দিয়েছেন। মহান অল্লাহ রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা হুজরাত : ১০) তাওহিদের পর মুমিনদের যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো সংঘবদ্ধতা। ইসলামে সংঘবদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন, তোমরা সেই লোকদের মতো হবে না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা আল ইমরান : ১০৫)

আল্লাহতায়ালা আরো এরশাদ করেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, সালাত কায়েম করো এবং কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হবে না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত।’ (সুরা তাওবাহ : ৩১-৩২) মহান রাব্বুল আলামিন আরো এরশাদ করেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা ইমরান : ১০৩)। কোরআনে আরো এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তাদের বেশি ভালোবাসি যারা আল্লাহর রাস্তায় এমনভাবে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, ঠিক যেন শিসাঢালা এক সূদৃঢ় প্রাচীর।’ (সুরা সফ : ৬১) হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মুমিনরা একজন মানুষের মতো, যার চোখ আক্রান্ত হলে সব শরীর আক্রান্ত হয় আর তার মাথা আক্রান্ত হলে পুরো শরীর আহত হয়।’ (মুসলিম : ২৫৮৬)

হজরত হারিছ আল আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘আমি তোমাদের পাঁচ বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি, স্বয়ং রব আমাকে এগুলোর নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়গুলো হচ্ছে- ১. সংঘবদ্ধ। ২. আমিরের নির্দেশ শ্রবণ। ৩. আমিরের নির্দেশ পালন। ৪. হিজরত। ৫. অল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধতা ত্যাগ করে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরে গেছে, সে নিজের গর্দান থেকে ইসলামের রজ্জু খুলে ফেলেছে। সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সা.) সালাম কায়েম এবং সাওম পালন করা সত্ত্বেও? উত্তরে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নামাজ কায়েম এবং রোজা পালন এবং মুসলমান বলে দাবি করা সত্ত্বেও।’ (তিরমিজি : ২৭৯০) রাসুল (সা.) আরো এরশাদ করেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়া, অনুগ্রহ, মায়া-মমতার দৃষ্টিকোণ থেকে তুমি মুমিনদের দেখবে একটি দেহের মতো। যদি দেহের কোনো একট অংশ আহত হয়ে পড়ে তবে অন্যান্য অংশও তা অনুভব করে।’ (বুখারি : ৬০১১) রাসুলে আকরাম (সা.) আরো এরশাদ করেন, ‘তোমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করো, সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জীবনযাপন করো না, কারণ বিচ্ছিন্ন হলে শয়তানের কুপ্ররোচনায় আকৃষ্ট হয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।’ (আবু দাউদ : ১৯৩৬)

রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘মুমিনরা অন্য মুমিনের জন্য একটি প্রাচীরের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে মজবুত করে। এরপর তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙুলে প্রবিষ্ট করেন।’ (বুখারি : ২৭২৫) হজরত আবদুল্লাাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিনজন লোক কোনো নির্জন প্রান্তরে থাকলেও একজনকে আমির না বানিয়ে থাকা জায়েজ নয়।’ (আহমদ আল মুসনাদ : ৬৩৬০) হজরত ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সংঘবদ্ধ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহেলিয়াতের মৃত্যু।’ (মুসলিম : ৫২৯২)। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম অংশে বসবাস করে আনন্দিত হতে চায় সে যেন ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে।’ (তিরমিজি : ১১২৬) আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close