reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ জুন, ২০২২

নেতিবাচক প্রবাহে চাপা পড়ছে মানবিক বোধ

প্রতিটি বিষয়ের বা কর্মের পরস্পরবিরোধী দুটি দিক আছে। একটি ঋণাত্মক, অপরটি ধ্বনাত্মক। একটি মানুষ বা প্রকৃতির কল্যাণে, অপরটি ক্ষতি সাধনে। আবার এ দুটিই মানুষের বোধের ওপর নির্ভরশীল। বোধই এর চালিকাশক্তি। তাই বোধের চর্চাই এখানে মুখ্য। বোধ যদি ইতিবাচক দিকে পরিচালিত হয় তাহলে সমাজ নান্দনিক হতে পারে। যদি নেতিবাচক দিকে পরিচালিত হয় তাহলে সমাজে নানাবিধ অসন্তোষের জন্ম দেয়। যার একটি জীবন্ত উদাহরণ সমাজের মেধা ও মননকে রক্তাক্ত করেছে। আমরা আহত হয়েছি। সীমিত পরিসরে প্রতিবাদও হচ্ছে। কিন্তু সে প্রতিবাদে বোধের নেতিবাচক স্বভাবের কতটুকু পরিবর্তন ঘটবে তা আমাদের জানা নেই। তবে এটুকু বলা যায়, বিষয়টি সমাজ গঠনের অনুকূলে নয়।

ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ঢাকার আশুলিয়ার এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় উৎপল কুমার নামের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এক বখাটে। কিশোরটি ছাত্রও বটে। অন্যদিকে, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। উৎপল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাস করার পর তিনি আশুলিয়ার হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক হিসেবে কাজে যোগ দেন। অভিযুক্ত বখাটে ছাত্র এলাকার উজ্জ্বল হাজির ছেলে ও একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক হাজি হজরত আলীর ভাগিনার ছেলে এই বখাটে ছাত্র। ঘটনার পর স্থানীয়দের সহযোগিতায় ছাড়া পেয়ে পালিয়ে যায় সে। বাহ্যত তাৎক্ষণিক অনেক প্রতিবাদের সাইক্লোন উঠলেও সম্ভবত তার প্রখরতা কমে আসবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। এ রকম বখাটে ছাত্রের তাণ্ডব এটিই একমাত্র নয়। প্রায়ই এ রকম ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সমাজে ক্ষতের পরিমাণ পেছনের সব রেকর্ডকে প্রতিনিয়তই অতিক্রম করছে, যা দেশ ও জাতির জন্য একটি অশুভ সংকেত বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

সাভারের আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা ও নড়াইলের শিক্ষককে লাঞ্ছনার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। তারা বলেছেন, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সমাজ ক্রমেই অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পথ হারানোর আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। তাদের এই আহ্বানকে সম্মান জানাতে হয়। একাত্মতা ঘোষণারও কোনো বিকল্প নেই। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলতে হয়, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বলতে তারা কী বোঝাতে চেয়েছেন। হত্যাকারীর শাস্তি নিশ্চিত করা! তার পরও কথা থেকেই যায়। শাস্তি নিশ্চিত হলেই কি এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না!!

বাস্তবতা বলছে, ঘটবে। বরং ক্রমেই তা বৃদ্ধি পেয়ে এক ভয়ংকর রূপে আবির্ভাব হবে। কেননা, সার্বিকভাবে আমাদের মানবিক বোধের অবক্ষয় এমন একপর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে অনৈতিকতার সঙ্গে যুদ্ধটা হয়ে উঠেছে অসম। লুটেরা পুঁজির চারিত্রিক দৌরাত্ম্যের সামনে অসহায় জাতীয় পুঁজির চরিত্র। আর লুটেরা পুঁজির চারিত্রিক পুঁজির বহিঃপ্রকাশই সমাজের সব অসংলগ্নতা। একে সারাতে হলে পুঁজির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন দরকার। এখানেই হাত লাগাতে হবে। নতুন ফর্মূলায় এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে। যেখানে শুধু সরকারই নয়, দেশের সব মানুষের অংশগ্রহণ হতে হবে বাধ্যতামূলক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close