সাহাদাৎ রানা

  ২৫ জুন, ২০২২

বিশ্লেষণ

পদ্মা সেতু একটি গৌরবের নাম

আমাদের কাছে পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয়। পদ্মা সেতু এখন বাস্তবতা। পদ্মা সেতু, বাঙালিদের কাছে এক অন্যরকম আবেগের নাম। স্বপ্নের নাম, বিশ্বাসের নামও। সম্পূর্ণ নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করে পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছে বাঙালিরা। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশ্বের বুকে আবারও প্রমাণ করলেন বাঙালিরা ইচ্ছা করলে সবকিছু পারে। দেশের সবচেয়ে বড় নদীতে নিজেদের টাকায় সবচেয়ে বড় সেতুও তৈরি করতে পারে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বিষয়ে একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মূল সেতুর নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুতে বসে প্রথম স্প্যান। অথচ পদ্মা সেতু হওয়া না হওয়া নিয়ে ছিল নানা সংশয়।

শুরুতে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে। কিন্তু কাজ শুরুর আগেই পরামর্শক নিয়োগসহ কয়েকটি বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটিতে অর্থায়ন স্থগিত করে। অবশ্য পরে কানাডার আদালত এ সংক্রান্ত একটি মামলায় বাংলাদেশের পক্ষে রায় দেয়। যে দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা ঋণ বাতিল করেছিল বিশ্বব্যাংক, সেই দুর্নীতির মামলাকে ‘অনুমানভিত্তিক’ বলে উল্লেখ করে রায় দিয়েছিল কানাডার একটি আদালত। এতে প্রমাণিত হয় বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট ও মিথ্যা। এই রায়ের ফলে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে পদ্মা সেতু যেন তৈরি হতে না পারে তা নিয়ে হয়েছিল ষড়যন্ত্র। আর এমন ষড়যন্ত্র ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে লিখিত থাকবে। তবে যেকোনো ষড়যন্ত্রকে পেছনে ফেলে সামনে এগোতে পারে বাঙালি জাতি এটাও প্রমাণিত হয়েছে। বাস্তবতা হলো মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিশ্বব্যাংকের পিছিয়ে যাওয়ার কারণে এই সেতু নির্মাণের বিষয়ে সে সময় দেখা দেয় শঙ্কা। তবে সব শঙ্কাকে পেছনে ফেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানানোর। প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর সব আশঙ্কা দূর করে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন হয়েছে। পদ্ম সেতুর ফলে দক্ষিণ জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো।

এখন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সরাসরি যোগাযোগের পথ তৈরি হয়েছে। আর এমন যোগাযোগের কারণে পাল্টে যাবে ২১ জেলার চিত্র। উন্নয়নের শতভাগ সুফল ভোগ করবে ২১ জেলাসহ সারা দেশের মানুষ। শুরুতে স্বপ্ন হলেও এখন পদ্মা সেতু বাস্তব সত্য। নিজেদের টাকায় এমন বিশাল একটি সেতুর মালিক হওয়া সত্যিই গর্বের বিষয়। বাস্তবতা হলো পদ্মা সেতুর কারণে আজ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হলো। পদ্মা সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। পদ্মা সেতু চালুর কারণে এক থেকে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার প্রত্যাশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দারিদ্র্যের হারও কিছুটা কমে আসবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন হবে। তবে সর্বপ্রথম এপাড়-ওপাড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে।

পদ্মা সেতুর কারণে দুই পাড়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি বিনিয়োগ বাড়বে। সেই বিনিয়োগে লাভবান হবে সবাই। এই সেতুর মাধ্যমে কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হবেন। এমন একটা সময় ছিল যখন পদ্মার ওপাড়ের কৃষকরা তাদের কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতেন না। ঢাকা বা অন্য জায়গায় না পাঠানোর কারণে কৃষি পণ্য পচে ক্ষতিগ্রস্ত হতেন কৃষকরা। কিন্তু এখন পদ্মা সেতুর কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরাসরি দ্রুত পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন তারা। ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষক শ্রেণি আরো বেশি করে উৎপাদনে মনোযোগী হবেন। পদ্মা সেতুর কারণে আমাদের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ফল আসবে। যেহেতু আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ সেহেতু কৃষি অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর ভূমিকা ব্যাপক হবে। সরাসরি লাভবান হবেন কৃষকরা। শুধু কৃষি অর্থনীতি নয়, যোগাযোগের ক্ষেত্রে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। এমন একটা সময় ছিল যখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ফেরি পাড়ি দিয়ে পদ্মা পার হতেন। ১২-১৪ ঘণ্টার সেই যাত্রাটা ছিল অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তির।

অস্বস্তিকর ও দীর্ঘ ভোগান্তি কাটিয়ে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মানুষ নিমিষে পাড়ি দেবেন পদ্মা। ১২-১৪ ঘণ্টার পথ পাড়ি দেবে অর্ধেকেরও কম সময়ে। এতে লাখ লাখ মানুষের মূল্যবান সময় সাশ্রয় হবে। কর্মঘণ্টা বেঁচে যাবে। এমন কর্মঘণ্টাও অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। পদ্মা সেতু দিয়ে শুধু গাড়ি চলবে তা কিন্তু নয়।

আগামী মাস থেকে সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হবে। এটাও একটা মাইলফলক। একসঙ্গে চলবে গাড়ি ও ট্রেন। রেলের কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ছয় মাস। এ বছরই ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলের কাজ শেষ হবে। ২০২৩ সালে ভাঙ্গা পর্যন্ত শেষ হলে আগামী বছরের ২৬ মার্চ রেললাইন উদ্বোধনের কথা রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে দেশের অর্থনীতিতে পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। পদ্মা সেতু চালুর কারণে এক থেকে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়ার প্রত্যাশা করছেন অর্থনীতিবিদরা। শুধু তাই নয়, পদ্মা সেতুর কারণে দেশের দারিদ্র্যের হারও কিছুটা কমে আসবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে ইতিবাচক অনেক পরিবর্তন হবে। তবে সর্বপ্রথম এপাড়-ওপাড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। লাভবান হবেন সবাই।

নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো একটি বিষয় প্রমাণ করলেন। আর তাহলো বাঙালি জাতি ইচ্ছা করলে অনেক কিছু করতে পারে। প্রয়োজন ইচ্ছা শক্তি ও সাহসের। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের প্রমাণ করে দেখালেন। এক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় প্রমাণিত

হয়েছে। সেটা আমাদের সক্ষমতা বিষয়ে। পদ্মা সেতুর মতো এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে এটা প্রমাণিত হয়েছে আরো অনেক বড়

বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব। পদ্মা সেতু এখন আমাদের সক্ষমতার প্রতীক লেও ভুল হবে না। পদ্মা সেতু বিষয়ে আমাদের কিছু সতর্কতা প্রয়োজন। বিশেষ করে সেতু নির্মাণের সময়ে পিলারে ফেরির ধাক্কা সত্যি শঙ্কার বিষয়। সেতু উদ্বোধনের পর যেন এ ধরনের কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আর নিশ্চিত করতে হবে পদ্মা সেতুর নিরাপত্তাও। কারণ পদ্মা সেতু আমাদের কোনো সাধারণ স্থাপনা নয়। এটার সঙ্গে অনেক স্বপ্ন, অনেক আবেগ জড়িত। এই স্বপ্ন ও আবেগকে সঙ্গী করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close