reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ জুন, ২০২২

বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন

হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। পরিবারের ছোট ছেলেমেয়ে এবং বয়োবৃদ্ধদের নিয়ে চলছে মানবেতর জীবনযাপন। চারদিকে শুধু হাহাকার আর আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে। তীব্র বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ বেশ কয়েকটি জেলায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির সব প্লাবিত হয়েছে। পানির প্রবল তোড়ে বাঁধ সংলগ্ন প্রায় সব সড়কও ভেসে গেছে। এতে করে বেঁচে থাকার জন্য শেষ সম্বলটুকু নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, গবাদি পশু, পাখি নিয়ে ছুটতে হয়েছে নিরাপদ আশ্রয়ে। সেখানেও মিলছে না একটুখানি স্বস্তির আশ্রয়।

খাবার সংকট, নিরাপদ পানির অভাবে একপ্রকার বাধ্য হয়েই বন্যার পানি পান করতে হচ্ছে তাদের। আর পথ চেয়ে বসে আছে সাহায্যের আশায়। সরকারিভাবে কিংবা সমাজের বিত্তবান মানুষের করা সহযোগিতা তাদের এখন একমাত্র বেঁচে থাকার শেষ উপায়। কিন্তু সরকার থেকে এসব মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যে পরিমাণ সাহায্য-সহযোগিতা করা হচ্ছে সেটা কোনোভাবেই যথেষ্ট নয়। এমতাবস্থায় বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। জোগান দিতে হবে আরো বেশি খাদ্য সহায়তা। মনে রাখতে হবে, দুর্যোগে দুস্থদের পাশে দাঁড়ানোই ইসলামের নির্দেশ।

সিলেট এবং সুনামগঞ্জ, কোম্পানিগঞ্জের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব অঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে থাকায় এখানে বসবাসরত মানুষ খুব কষ্টে দিনপাত করছে। দেশের এই অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ বন্যার প্রভাবে নির্ধারিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে সারা দেশে। বিগত কয়েক যুগ ধরে বন্যার ফলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি কখনো। সংকটময় এই অবস্থা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে, যা পুরো দেশের মানুষ যেকোনোভাবে চেষ্টা করছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। এরই মধ্যে দেশের এলিট শ্রেণির কিছু মানুষ সরাসরি নেমে এসেছেন তাদের পাশে দাঁড়াতে। কেউ কেউ নিজে নগদ অর্থ দিয়ে, বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা, খাবার সংগ্রহ করে তাদের সহযোগিতা করছেন। অনেকে সশরীরে গিয়ে নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করেছেন। দেশের বিভিন্ন শহরে সামাজিক সংগঠনের ছেলেমেয়েদের এসব বন্যাদুর্তদের পাশে দাঁড়াতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য একজায়গায় করে তাদের কাছে পৌঁছে দিতেও দেখা গেছে। বিভিন্ন মাধ্যমে মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেটা আমাদের জাতীয় এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় যোগ দিয়েছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনীসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক সংগঠন।

তবে সরকারিভাবে আরো বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি নিরাপদ পানির বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সেক্ষেত্রে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়ে হলেও তাদের বিষয়টি লক্ষ রাখতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বিকল্পবাতির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ কিংবা খাদ্য সহায়তা দেওয়া হলেও সেখানে থাকা গৃহ পালিত পশুপাখির খাবারের বিষয়েও সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে বন্যা মোকাবিলায় সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে তা না হলে বর্তমানে জলবায়ুগত পরিবর্তনের ফলে এভাবে অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যার প্রভাব অব্যাহত থাকলে আমাদের জন্য তা একটি বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, যা দেশের কোনো বিবেকবান মানুষের কাম্য নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close