রায়হান আহমেদ তপাদার

  ২২ জুন, ২০২২

দৃষ্টিপাত

অস্ট্রেলিয়ায় ক্ষমতা বদল

অস্ট্রেলিয়া অনেক বড় একটি দেশ। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীগুলো সাধারণত সমুদ্রতীরে অবস্থিত। মাঝখানের এলাকাগুলো সাধারণত মরুভূমি এবং সেগুলো খনিজসম্পদে পরিপূর্ণ। সে কারণেই তারা খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে। এসব এলাকায় কৃষি উৎপাদন হয় না বললেই চলে, যা হয় তা ওই উপকূলীয় এলাকাগুলোতেই। দেশটিতে নগরবাসী মানুষই বেশি। গ্রামে বসবাসকারী মানুষ তেমন নেই। এ দেশে সম্পদের কোনো অভাব নেই। সম্পদ অনুপাতে জনসংখ্যা কম। সেজন্য তারা সব সময়ই উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এখানে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো, ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের দিক থেকে তারা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছে। আর তা হচ্ছে স্থানীয় চাহিদা কম এবং উচ্চনৈতিকতাসম্পন্ন উৎপাদন প্রক্রিয়া। যে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বলা যায়, এখানে শ্রমিকদের বেতন দিতে হয় অনেক বেশি। পরিবেশ-সংক্রান্ত বিষয়গুলোর প্রতি তারা খুব সচেতন।

পরিবেশ দূষণের কথা ভেবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তারা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। এসব শ্রমঘনশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের দিয়েই গঠিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া উচ্চনৈতিকতাসম্পন্ন। এ দেশে শ্রমিকের স্বার্থ সুরক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়ার অবকাশ নেই। সরকার যেকোনো পার্টিরই হোক, লেবার, লিবারেল কিংবা ন্যাশনাল- সবাইকেই শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে হয়। এভাবেই অস্ট্রেলিয়া ক্রমে পরিণত হয়েছে ওয়েলফেয়ার স্টেটে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৪৭তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এতে জয়লাভ করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। দেশটির নতুন সরকারের ৩১তম প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজি। এ ছাড়া রেকর্ড পরিমাণ ১৩ নারী মন্ত্রীসহ দেশটির প্রথম মুসলিম ২ মন্ত্রীও রয়েছেন এ নতুন সরকারে। গত ২৩ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজি।

তবে একই দিনে মাত্র চার মন্ত্রী নিয়েই মন্ত্রিসভা গঠন করতে হয় তাকে। কেননা পরের দিন, অর্থাৎ ২৪ মে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয় সামরিক জোট হিসেবে পরিচিত ‘কোয়াড’-এর সম্মেলন। এ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ আরো উপস্থিত হন ভারত ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, নতুন সরকারের কাছে যে ‘কোয়াড’ এবং জো বাইডেন গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখাতেই তড়িঘড়ি মন্ত্রিসভা গঠন করে বিদেশ সফরে যান অস্ট্রেলিয়ার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। অ্যান্থনি অ্যালবানিজির নেতৃত্বে গঠিত লেবার পার্টির নতুন মন্ত্রিসভায় বেশ কটি ঐতিহাসিক বিষয়ও রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম থাকছে দেশটির প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রীসহ ফেডারেল মন্ত্রিসভায় প্রথম দুই মুসলিম মন্ত্রীর কোরআন হাতে শপথগ্রহণ। দেশটির প্রথম মুসলিম নারী মন্ত্রী হিসেবে অ্যানে আলি প্রাক্?-প্রাথমিক শিক্ষা এবং যুব মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্যদিকে ফেডারেল সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী হিসেবে শিল্প ও বিজ্ঞান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এড হিউজিক হোপ। তিনি এর আগে কয়েক দফায় বিরোধী দলের ছায়া মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সাংবিধানিক রাজতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও এ সরকার নিয়োগ দিয়েছে একজন প্রজাতন্ত্রকরণমন্ত্রী। এর মানে যুক্তরাজ্যের ৯৬ বছর বয়সি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ যখন তার প্লাটিনাম জুবিলি উদ্?যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার এই নির্বাচিত সরকার এ নিয়োগের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য একটি প্রতীকী পদক্ষেপ নিল। অস্ট্রেলিয়া সাংবিধানিকভাবে রাজতন্ত্র। কিন্তু এ সরকার নিয়োগ দিল এমন এক মন্ত্রী, যার কাজ হবে অস্ট্রেলিয়াকে রাজতন্ত্র থেকে বের করে প্রজাতন্ত্র করা। এর আগেও ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়াকে রাজতন্ত্র থেকে বের করে প্রজাতন্ত্র করতে এক গণভোট হয়েছিল। তখন অস্ট্রেলিয়ার ৫৫ শতাংশ জনগণ রাজতন্ত্রের অধীন থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। ফলে এখনো যুক্তরাজ্যের রাজতন্ত্র টিকে আছে অস্ট্রেলিয়ায়।

অ্যান্থনি অ্যালবানিজি দেশটির এখন চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালের পর নির্বাচনে সরকারি দলকে হারিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। তার মন্ত্রিসভায় রয়েছেন ১৩ নারী মন্ত্রী। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন হলেন পেনি ওয়াং এবং লিন্ডা বার্নি। পেনি ওয়াং এশিয়ায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মন্ত্রী, তার বাবা একজন চীনা-মালয়েশিয়ান। দায়িত্বরত থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। এদিকে লিন্ডা বার্নি দেশটির প্রথম নারী আদিবাসী, যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন আদিবাসীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের। সদ্য নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় এ নতুনত্ব প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশটিতে। অ্যালবানিজি নিজেও ব্যতিক্রম। তিনি দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যার পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ ছিলেন না। ৫৯ বছর বয়সি অ্যান্থনি তার প্রতিবন্ধী মায়ের ভাতার অর্থে বড় হয়েছেন। তার ইতালীয় বাবা জন্মের আগেই তাদের ছেড়ে চলে যান। অ্যান্থনি ৪০ বছর বয়সে তার বাবাকে খুঁজে বের করে প্রথমবারের মতো দেখা করেছিলেন। অ্যান্থনি তার পরিবারের প্রথম, যিনি কি না কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া লেবার পার্টির প্রতি ভালোবাসা থেকে যোগ দেন দলটিতে। ১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন অ্যান্থনি। তবে প্রায় দুই দশক ধরে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থাতেও রাজনীতিবিদ হিসেবে তার তেমন কোনো পরিচিতই ছিল না।

দেশটির এবারের নির্বাচনে লেবার পার্টির জয়লাভ ছিল প্রত্যাশিত। তবে নির্বাচনের ফার্স্ট প্রেফারেন্স ভোটে ৩৫ শতাংশ ভোট এসেছিল ক্ষমতাসীন হেরে যাওয়া লিবারেল পার্টির পক্ষে, যেখানে লেবার পার্টি ভোট পেয়েছিল ৩২ শতাংশ। দেশটির ১৫১টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭৭টি আসনে জয়লাভ করেছে লেবার পার্টি। অন্যদিকে সদ্য ক্ষমতাহারা দল লিবারেল পার্টি জয় পায় ৫৮টি আসনে। এ জয়ের মধ্য দিয়ে আবার প্রায় ১০ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি। এর আগের মেয়াদে ২০০৭ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর ক্ষমতায় ছিল দলটি।

তখন লেবার পার্টির চরম দলীয় কোন্দলের কারণে কয়েকবার পার্টিপ্রধান ও দেশটির প্রধানমন্ত্রিত্ব বদল হয়। শেষমেশ ২০১৩ সালের ফেডারেল নির্বাচনে দলের ব্যাপক ভরাডুবিতে ক্ষমতাহারা হয় দলটি। তারপর ক্রমাগত প্রায় ১০ বছরের চেষ্টায় এবার সফল হয়। এ সফলতায় লেবার পার্টির কৃতিত্বের সঙ্গে লিবারেল পার্টির ব্যর্থতারও একটা অংশের অবদান রয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত। ২০১৯ সালের নির্বাচনেও এই দলের ক্ষমতার আসার কথা ছিল কিন্তু পার্টিপ্রধান বিল শর্টেনের ক্যারিশম্যাটিক যোগ্যতার অভাবে দল হেরে যায় বলে একটা রব ওঠে। ফলে বিল শর্টেন বিদায় নেন। আসেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজি। তিনি দলের মধ্য বাম ধারার নেতা। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সিডনির মানুষ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার।

অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকার দলের বেশ কটি পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম কয়েকটি বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজি। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু এ সরকারের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছে এই মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার পদক্ষেপগুলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষাকে অস্ট্রেলিয়া এরই মধ্যে প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি চীন সলোমন দ্বীপপুঞ্জকে একটি নিরাপত্তা চুক্তিতে সই করালেও অস্ট্রেলিয়া দ্রুত তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়াংকে সামোয়া ও টোঙ্গায় পাঠায় এবং অন্য দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোকে এ ধরনের আঞ্চলিক চুক্তিতে যোগ না দেওয়াতে সমর্থ হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ‘মেডিকেয়ার’ আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি ‘চাইল্ডকেয়ার’ আরো সস্তা করা। স্থানীয় চাকরি বৃদ্ধি করা। আমদানি কমিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পণ্যের উৎপাদন বাড়ানো এবং সব ধরনের আয়কর কমিয়ে আনা।

অভিবাসনবান্ধব অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকারের অভিবাসন নিয়ে বড়-সড় কোনো পরিকল্পনা এখনো সামনে আসেনি। একদিকে মন্ত্রিসভা গঠনের দিনই নতুন সরকার দল একটি আশ্রয় প্রার্থী নৌকাকে শ্রীলঙ্কায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে প্রায় চার বছর ধরে শরণার্থী কেন্দ্রে আটকে থাকা এক তামিল পরিবারকে মুক্ত করে দিয়েছেন অ্যান্থনি অ্যালবানিজি। তবে স্থায়ী ভিসার ক্ষেত্রে লেবার পার্টির সুনজর থাকছে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। অস্থায়ী কর্ম ভিসায় শ্রমবাজার চালানোর অনেকটাই বিপক্ষে খোদ নতুন প্রধানমন্ত্রী। এজন্যই নির্বাচনী প্রচারে বিদেশি শ্রমিকদের স্থায়ী ভিসা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন অ্যান্থনি। সবকিছু মিলে অস্ট্রেলিয়ার নতুন সংসদটিতে যেমন রয়েছে, রেকর্ডসংখ্যক আদিবাসী সদস্যসহ এশীয় বংশোদ্ভূত সংমিশ্রণের বৈচিত্র্য, তেমনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ফলে নীতিনির্ধারণী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে এ সরকারের। প্রায় এক দশক পর অস্ট্রেলিয়ার ক্ষমতায় এলো লেবার পার্টির নেতা। শনিবার দেশটির সাধারণ নির্বাচনে কনজারভেটিভ ও মধ্য-ডানপন্থি স্কট মরিসনকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন মধ্য-বামপন্থি অ্যান্থনি আলবানিজ। তিনি তার সমর্থকদের উদ্দেশে অ্যান্থনি অ্যালবানিজ বলেন, জনগণ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। আমার কাছে, অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়া এক মহান অর্জন। তাই উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের সামনে সবাইকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন ৫৯ বছর বয়সি অ্যালবানিজ। মধ্য-বামপন্থি নতুন প্রধানমন্ত্রী সবাইকে নিয়ে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। এ ছাড়া সামাজিক সেবাগুলোতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ বন্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। লিবারেল পার্টির প্রধানের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন অ্যালবানিজ। এদিকে পরাজয় মেনে নিয়ে স্কট মরিসন বলেন, ভোটের এই রায়ে অস্ট্রেলিয়ার জনগণের অবিশ্বাস্য এক ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী অ্যালবানিজের নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

ওদিকে দেশটির নতুন ফার্স্টলেডি হতে যাচ্ছেন অ্যালবানিজের গার্লফ্রেন্ড জোডি হেডন। ৪৩ বছর বয়সি হেডন দুই বছর ধরে অ্যালবানিজের বান্ধবী। হেডন হতে যাচ্ছেন দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় ফার্স্টলেডি যিনি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী নন, তবে বান্ধবী। লেবার পার্টির সবশেষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কেভিন রুড। ২০১৩ সালের নির্বাচনে কনজারভেটিভ লেবারেল ন্যাশনাল কোয়ালিশনের কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান রুড। ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলটির পরাজয়ের পর বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন লেবার নেতা আলবানিজ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী কেভিন রুড ও জুলিয়া গিলার্ডের শাসনামলে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অ্যালবানিজ। রাষ্ট্র হিসেবে অস্ট্রেলিয়া যতটা স্থিতিশীল, দেশটির রাজনীতি যেন ততটাই অস্থিতিশীল। শান্ত পরিবেশ থেকে গত ২১ আগস্ট হঠাৎ করেই অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে উত্তাপ বইতে শুরু করে। মাত্র চার দিনের ব্যবধানেই দেশটিতে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসে। আগের প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলের জায়গায় স্থলাভিষিক্ত হন স্কট মরিসন। সবকিছু হয়েছে মাত্র চার দিনের ব্যবধানে! ম্যালকম টার্নবুল গত এক দশকের মধ্যে চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী, যিনি তার সহকর্মীদের দ্বারা উচ্ছেদের শিকার হয়েছেন।

পৃথিবীর প্রায় সব গণতান্ত্রিক দেশেই সরকারের মেয়াদ চার বা পাঁচ বছর। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় প্রতি তিন বছর অন্তর অন্তর জাতীয় নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। সরকারের মেয়াদ তিন বছর বা ৩৬ মাস হলেও ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯০ সাল থেকেই সরকারগুলোর মেয়াদ ছিল গড়ে ৩২ মাস। এখানেই মূল সমস্যা দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, সরকারের মেয়াদ এত অল্প হওয়ায় পরবর্তী নির্বাচন সব সময় দৃষ্টিসীমার মধ্যেই থাকে। তাই সরকারগুলোও পরবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে- এমন পরিকল্পনা বাদ দিয়ে কম সময়ে বেশি রাজনৈতিক সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করে।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close