reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২১ জুন, ২০২২

সচেতনতার বিকল্প নেই

বজ্রপাত নিঃসন্দেহে প্রকৃতির এক ভয়ংকর রূপ। যদিও বজ্রের গর্জন আর আকাশে চোখ ধাঁধানো স্ফুলিঙ্গ বৃষ্টির বার্তা বয়ে আনে। কিন্তু ইদানীং এই বার্তা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি আগের চেয়ে অনেকে বেড়েছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। এই বৃদ্ধি জলবায়ুগত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের ফল, তা সহজেই বলা যায়। যদিও বিশে^ সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত ঘটে ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলে। কিন্তু বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যায় বাংলাদেশ এগিয়ে। এ দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে যত মানুষ মারা যায়, তার দ্বিতীয় কারণ বজ্রপাত। বজ্রপাতে এভাবে মানুষের মৃত্যুর মিছিল ক্রমে দীর্ঘায়িত হওয়ায় মানুষ আজ আতঙ্কিত।

বলা সংগত, সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ আর প্রকৃতির সহাবস্থান। মানুষ বুঝতে পেরেছিল প্রকৃতিই তাদের বেঁচে থাকার পথ। তাদের খাদ্য, আশ্রয় আর নিরাপত্তা সবই দিতে পারে প্রকৃতি। তাই প্রকৃতির ওপর মানুষের দখল বাড়তে থাকে। প্রতিনিয়ত অত্যাচারের ফলে প্রকৃতি হয়েছে ভারসাম্যহীন। প্রকৃতির এই ক্ষত যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, তা মানুষ প্রথমটায় বুঝতে পারেনি। আবার বুঝতে পারলেও তা থেকে শিক্ষা নেয়নি। প্রকৃতির প্রতিশোধ অবশ্যই ফিরে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্ট সেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, হিমালয়ের পাদদেশ থেকে বিস্তৃত অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশে অতিমাত্রায় বজ্রপাত হয়ে থাকে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে বজ্রপাত। তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, দেশে বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ছে। বজ্রপাতে ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এক দশকে মারা গেছে ২ হাজার ৭৮৫ জন। গত ১৭ জুন বজ্রপাতে এক দিনে মারা গেছে ১১ জন। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বছরের মে থেকে জুন পর্যন্ত সময় সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আর জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনের প্রভাবে বজ্রপাতের ঘটনা বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও।

বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে হলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। আর এজন্য বজ্রপাত সচেতনতার বিষয়টি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা সময়ের দাবি। মাঠে মাঠে বজ্ররোধক টাওয়ার নির্মাণ করতে হবে। পাশাপাশি বিশালাকৃতির বৃক্ষরোপণ করতে হবে। একসময় বজ্রপাত নিয়ে মাথাব্যথার কারণ ছিল না। কারণ তখন মানুষের মৃত্যু এত ঘটেনি। কিন্তু দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বজ্রপাতে প্রাণহানি বাড়ছে। মনে রাখতে হবে, বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা কোনো পূর্বাভাস দিয়ে আসে না। বাংলাদেশের মানুষ অতীত থেকেই বন্যা, ভাঙন বা ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে আসছে। বজ্রপাতে আগেও মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তবে সংখ্যায় কম। কারণ আগের পরিবেশ এবং বর্তমানের পরিবেশে রয়েছে ব্যাপক ব্যবধান। ফলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ রুখতে পরিবেশ উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সচেতনতার বিকল্প নেই। বজ্রপাতে হতাহত কমিয়ে আনতে এখনই সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close