এহসান বিন মুজাহির

  ২০ জুন, ২০২২

মুক্তমত

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর এখনই সময়

টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সিলেট বিভাগে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে আবার ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের প্রায় সব কটি জেলায় প্রবেশ করেছে। এর ফলে সিলেটে পানির ভয়ালপ্রবাহে জনজীবন আজ বিপর্যস্ত। ভয়াবহ বন্যার কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জের লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে প্রতি মুহূর্তে ভোগ করছেন অবর্ণনীয় কষ্ট ও দুর্ভোগ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী বন্যাকবলিত সিলেটের জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ এবং ওসমানীনগর এলাকার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, ফসল, মাছ ও স্থাপনা অথই পানিতে তলিয়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র উঁচু অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের কোমরসমান পানি মাড়িয়ে শিশু কিংবা পশু ঘাড়ে নিয়ে যাওয়ার কিংবা ঘরের চালে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অসংখ্য মানুষ বন্যার কারণে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে রাস্তায়, স্কুল-কলেজে নির্ঘুম রাত পার করছেন।

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দায়িত্ব। ত্রাণসহায়তার কাজে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তবে সরকারিভাবে অনেক এলাকায় ত্রাণসহায়তা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অতিদ্রুত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। আশার কথা হচ্ছে, গতকাল থেকে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। পুলিশ প্রশাসন এবং ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন। সরকারিভাবে অনেক এলাকায় ত্রাণসহায়তা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এ অঞ্চলের মানুষের কাছে অতিদ্রুত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে। বিশেষ করে এ মুহূর্তে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বন্যার্তদের উদ্ধারের পাশাপাশি বন্যাকবলিত এলাকাগুলোয় অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পান এ ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে অসহায় বন্যার্তদের সহায়তায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা মানবিক দায়িত্ব। বানভাসি মানুষের কষ্ট লাঘবে টাকাপয়সা, খাদ্য, বস্ত্র, পানি, ওষুধসহ যার যা কিছু আছে তা নিয়েই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যাদুর্গতদের সাহায্যে এগিয়ে আসার এখনই সময়।

অসহায়-বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানোও অনেক সওয়াবের কাজ। এটা অন্যতম একটি ইবাদতও বটে। পবিত্র কোরআনে কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দরিদ্র, এতিম ও বন্দিদের খাদ্যদান করে’। (সুরা দাহর, আয়াত : ৮)। আল্লাহ আরো এরশাদ করেন, ‘তাদের (বিত্তশালী) ধনসম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত : ১৯)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ দূর করবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার দুঃখণ্ডকষ্ট ও বিপদ দূর করে দেবেন।’ (বোখারি, হাদিস : ২৪৪২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বান্দা যতক্ষণ তার ভাইকে সাহায্য করে, আল্লাহ ততক্ষণ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩১৪)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন, যে তার বান্দাদের প্রতি দয়া করে।’ (বোখারি, হাদিস : ১৭৩২)। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, অসুস্থ লোকের সেবা করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো।’ (বোখারি, হাদিস : ৫৬৪৯)। রাসুল (সা.) আরো বলেন, ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্যের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখণ্ডদুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম : ২৫৬৬)।

আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার সেবা করোনি, বান্দা বলবে হে আমার প্রতিপালক আপনি তো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার সেবা করব? তিনি বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার সেবা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে। হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি। বান্দা বলবে হে আমার রব, তুমি হলে বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব? তিনি বলবেন, তুমি কি জানো না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি। তুমি কি জানো না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে আজ তা প্রাপ্ত হতে।

হে আদম সন্তান তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি। বান্দা বলবে, হে আমার প্রভু তুমি তো রাব্বুল আলামিন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব? তিনি বলবেন, তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭২১)। রাসুল (সা.) আরো এরশাদ করেন, মুমিনরা পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে এক দেহের মতো। দেহের কোনো অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে পুরো দেহ সে ব্যথা অনুভব করে।’ (বোখারি, হাদিস : ৬০১১)। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো দল-মত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দায়িত্ব।

লেখক : প্রিন্সিপাল

শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close