reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ জুন, ২০২২

স্থায়ী সমাধানের বিকল্প নেই

একই দৃশ্য, একই কাহিনি এবং একই পরিসমাপ্তি। দেখতে দেখতে আমরা যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কোনো সমাধান নেই। স্থায়ী সমাধান তো অনেক দূরে, প্রতি বছর যে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে তা যোগ করলে তা হয়তো বার্ষিক বাজেটের বেশি বই কম হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবুও হুঁশে ফিরতে পারেনি আমাদের দেশ সাজানোর পরিকল্পনাকারীরা। উন্নয়ন তো কম হচ্ছে না কিন্তু এই ক্ষেত্রটি যেন বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হয়ে দুর্ভোগ বৃত্তের মাঝেই থেকে গেছে। প্রতি বছরই বন্যা হচ্ছে। কেন হচ্ছে; তাও কারো অজানা নয়। অজ্ঞাত কারণেই রোগ মুক্তির জন্য সেরকম দক্ষ ডাক্তারের দেখা মিলছে না। টোটকা দিয়েই সারিয়ে তোলা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, আমরা দক্ষ ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাতে চাই। যন্ত্রণাদায়ক এই রোগের হাত থেকে মুক্তির একমাত্র পথ ‘স্থায়ী ব্যবস্থাপনা’। সম্ভবত এটিই স্থায়ী সমাধান এবং রাষ্ট্রকেই নিতে হবে এর দায়িত্ব।

সিলেটবাসী এখন বন্যায় ভাসছে। কবে পানি সরবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলা যায় আবহাওয়া অনুকূলে নয়। উজানে ভারী বৃষ্টিপাত চলছে। ঢলের গতি-প্রকৃতিও খারাপ ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সরকার তার সামর্থ্যসহ মাঠে নেমেছেন। বানভাসিদের পাশে সেনাবাহিনী। সম্ভবত ব্যাপক বন্য মোকাবিলায় সেনাবাহিনীই আমাদের শেষ ভরসা। হুহু করে বাড়ছে পানি। বন্যাকবলিত এলাকায় তৈরি হয়েছে চরম মানবিক বিপর্যয়। পানি বাড়তে বাড়তে মাথা ছাড়িয়ে গেছে। ঘরের চালাই এখন শেষ আশ্রয়। অনেক স্থানে নৌকার অভাবে আশ্রয় কেন্দ্রেও যেতে পারছেন না বানভাসি মানুষ। বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধারে সিলেট ও সুনামগঞ্জের আটটি উপজেলায় সেনাবাহিনীকে নামানো হয়েছে ত্রাণকর্তা হিসেবে।

যত দূর দৃষ্টি যায় কেবল পানি আর পানি। কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব সুস্পষ্ট। খাবারের অভাব তীব্রতর হচ্ছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ওসমানী বিমানবন্দরেও পানির আগ্রাসন। বন্দরের সব ফ্লাইট আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জসহ আরো কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষাসহ সমমানের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সিলেটে এরই মধ্যে সেনাবাহিনী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার কর্মকান্ড শুরু করেছে। আমরা মনে করি, শুধু উদ্ধার কর্মকান্ডে সীমাবদ্ধ থাকলেই আমাদের কাজ শেষ হবে না। দেশের সবাইকে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে। বাড়াতে হবে সহযোগিতার হাত। সরকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করে বসে থাকলে দুর্ভোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা সমাজে। আমরা জেনেছি, উজানের চেরাপুঞ্জিতে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা বছরের সেরা বৃষ্টিপাত। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চেরাপুঞ্জীতে ২৪ ঘন্টায় ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যা বিগত ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আর এই বৃষ্টি পানি বেরিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ বাংলাদেশ।

কেবল সিলেট জেলাই নয়, কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলাতেও বাড়ছে নদণ্ডনদীর পানি। বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ক্ষয়ক্ষতির কথা না বলে পরিত্রাণের কথাই আলোচনা করাটাই উত্তম। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রকে বন্যা নিয়ে নতুন করে নতুনভাবে নতুন পরিকল্পনায় যেতে হবে। স্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সরাতে এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে রুখতে সরকার তা করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close