দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২৮ মে, ২০২২

পদ্মা সেতু

সৎসাহস ও একটি সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হতে চলেছে আর মাত্র চার সপ্তাহ শেষে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার কয়েক কোটি মানুষের স্বপ্নসৌধ এ সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে ২৫ জুন থেকে। প্রধানমন্ত্রী এ সেতু উদ্বোধন করবেন। তিনি পদ্মা সেতু তার নামে করার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৪ মে গণভবনের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

স্মর্তব্য, ২০১২ সালের ১০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর নির্দেশ দেন। ২০১৪ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করা হয় সেতুর নির্মাণকাজ। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ পুরোদমে শুরু হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরুতে ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও সর্বশেষ তা তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকায়। ২০১১ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় উন্নীত করে এর সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ে। এর ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সর্বশেষ আরো ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বেড়ে তা ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে নিজস্ব অর্থায়নে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে ৪২টি পিয়ারের ওপর। পদ্মা সেতু চালু হলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সমৃদ্ধির পাদপ্রদীপের নিচে আসার সুযোগ পাবে। অন্তত ৪ কোটি মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তা অবদান রাখবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভালো দাম পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার বেড়ে যাবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে।

পদ্মার বুকে শুধু সেতু মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতু শেখ হাসিনার অবদান। শত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির বহু কাক্সিক্ষত স্বপ্নের পদ্মাসেতু আজ বাস্তব, আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অগ্রগতির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়েও তারা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদৃঢ় নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের ফলে বাঙালি জাতির দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হয়েছে। সমালোচকদের মুখে চুন-কালি দিয়ে সব ষড়যন্ত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বৃহৎ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পথে। মাননীয় নেত্রী ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন, তার অক্লান্ত পরিশ্রমে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ আজ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত।

দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের যে ক্ষতের জন্ম দেয় শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মার মূল সেতুর কাজ শেষ হওয়ায় তা দেশের সক্ষমতা আর শৌর্যের প্রমাণ হয়ে এখন দাঁড়িয়ে পদ্মার বুকে। আগামী ২৫ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যান চলাচলের জন্য পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু দেশের পদ্মা নদীর ওপর নির্মাণাধীন একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে।

দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে থাকবে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে একটি একক রেলপথ। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্প্যান এরই মধ্যে বসানো হয়েছে, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত হচ্ছে দেশটির সবচেয়ে বড় সেতু। পদ্মা সেতু নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ হচ্ছে স্বপ্নের এ সেতু। ২০১৪ সালে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

পরিশেষে বলছি, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তৃৃতি ঘটবে। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সার্বিক নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকার অবহেলা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close