reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৭ মে, ২০২২

আত্মনির্ভরশীলতার লক্ষ্যেই হবে আগামী বাজেট

গ্রামীণ কথকতা দিয়েই শুরু করা যাক। দাদা-দাদিকে বলতে শুনেছি, ‘মানুষ দেখে, শুনে ও ঠেকে শিক্ষা লাভ করে থাকে।’ দাদা-দাদিরা ছিলেন গ্রামের মানুষ। তারাও শুনেছেন তাদের বাপ-দাদার কাছ থেকে। বংশপরম্পরায় চলে আসছে। তবে বাক্যটি বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে প্রমাণিত সত্য। আর বিশ্বের অনেক দেশের মতো আমরাও এবার ঠেকে শিখলাম। এতকাল তো দেখেশু-নেই শিখেছি এবং চলেছি। এখন বোধহয় সে শিক্ষায় কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ঠেকে শেখার কাছে এই আত্মসমর্পণ। তবু ভালো, অনেক দেরিতে হলেও আমাদের চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে। কিছুটা হলেও বোধোদয়ের নমুনা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

শোনা যাচ্ছে, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে এবার উৎপাদন বাড়াতে চায় সরকার। বিষয়টি মিডিয়ায়ও এসেছে। উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে বেশকিছু পণ্যের স্বনির্ভরতার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে তার প্রতিফলন দেখা যেতে পারে। মানুষ যখন ঠেকে শেখে সেই শেখায় কোনো খাদ থাকে না। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে পৃথিবীর এখন টালমাটাল অবস্থা। অর্থনৈতিক মন্দা সর্বত্র। ভেঙে পড়ছে সামাজিক বলয়। এখন সবাই নিজেকে রক্ষার জন্য আত্মনির্ভরশীলতার পথে পা বাড়ানোর কথা চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশ্ববাজার অর্থনীতির দিকে না তাকিয়ে কিছুটা হলেও আলাদা করে নিজস্ব বাজার অর্থনীতিকে চাঙা করার কথাই ভাবছে।

আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতে প্রণোদনা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তথ্যমতে, কৃষি উৎপাদনের ৬ খাতে ১০ বছরের কর অবকাশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, দেশীয় কৃষিভিত্তিক শিল্পে বাংলাদেশে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিজাত পণ্যের আমদানি বিকল্প তৈরির মাধ্যমে কৃষিভিত্তিক শিল্প বিকাশ ঘটানোর কথা ভাবা হচ্ছে, যা দেশের কর্মসংস্থান পরিধিকে আরো বিস্তৃত করতে সক্ষম হবে। অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ সরকারের। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির নবজাগরণ আনার লক্ষ্যেই এ উদ্যোগ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী ২০৩০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে যারা এ খাতে বিনিয়োগ করবেন, তারাই এ আয়কর অব্যাহতির সুবিধা পাবেন। করমুক্তির সুবিধা নিতে ন্যূনতম এক কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বিডার নিবন্ধন নিতে হবে। কাঁচামাল পুরোটাই দেশে উৎপাদিত হতে হবে। সারে ভর্তুকি থাকবে ১৫ হাজার কোটি টাকা। একই সঙ্গে রাসায়নিক সারের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ভোজ্য তেলের চাহিদা প্রায় ২০ লাখ টন। চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়। এখান থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ রাইস ব্র্যান অয়েল ও সরিষার তেলের উৎপাদন বাড়ানো। উৎপাদন বাড়াতে পারলে খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা নির্ভরতা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে পারি। এ কথাও সত্য যে, একসময় আমরা পুরোটাই সরিষার তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। আবার সেখানে ফিরে যেতে কোনো দোষ নেই। যদিও বাজারে সয়াবিন ঢোকানোর সময় আমরা সরিষার তেলের বিরুদ্ধে অনেক নেতিবাচক কথা শুনেছি। শোনাতে অনেকটা বাধ্য করা হয়েছে।

আমাদের বিশ্বাস নিয়েই আমরা বেঁচে থাকতে চাই। তা না হলে যেকোনো সময় যেকোনো দেশের ষড়যন্ত্রের কাছে ধরাশায়ী হয়ে অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারি। মুক্তবাজার অর্থনীতি আমাদের মুক্তি দিতে পারেনি। তাই স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে চলাই হবে শ্রেয়তর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close