হুসাইন আহমদ

  ২৭ মে, ২০২২

ইসলাম

দুস্থদের সাহায্য করাও একটি ইবাদত

পরোপকার মানে মানবজাতির কল্যাণে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়ানো, এগিয়ে আসা, সহমর্মী হওয়া। শুধু নিজের সুখের জন্য নয় বরং অন্যের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করা। এ সবই হচ্ছে সাহায্য বা পরোপকার। আরেকভাবে বললে বলা যায়, আমাদের সমাজের নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি ও অপকর্ম বন্ধ ও সমাধানের নিয়তে কাজ করার চেষ্টা করাই হলো পরোপকার। এই পরোপকারই মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার। মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেছেন- ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে’- (আল-ইমরান : ১১০)। অপরদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও। তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি)।

আর মানুষের উত্তম গুণাবলির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই পরোপকার। তার কারণ, মানুষের জন্য একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া একা একা জীবনযাপন করা খুবই কঠিন। যখন কোনো সমাজে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার মন-মানসিকতা হ্রাস পায়। তখন সে সমাজের মানুষ সব দিক থেকেই পিছিয়ে পড়ে। সে সমাজের সর্বক্ষেত্রে অভাবের কারণে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, শান্তি বিলুপ্ত হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা দূর হয়ে যায়। ইসলাম একটি সহানুভূতির ধর্ম। যেখানে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সহযোগিতাই ইসলামের অন্যতম বিষয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। তাই পরোপকারের চেতনার ক্ষেত্রে কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিমণ্ডঅমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দের সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিন মিলেমিশে থাকে। তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যে মিলেমিশে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সে-ই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল-মুজামুল আওসাত)।

মনে রাখা দরকার, পরোপকার বা অন্যকে সাহায্য করলে নিজেরই কল্যাণ হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন ‘অবশ্যই দান-সদকা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায় এবং অহমিকা দূর করে।’ (আল-মুজামুল কাবির : ১৩৫০৮)। আর অনাথ-অসহায় ও অনাহারির কষ্টে সমব্যথী হতে আল্লাহ তায়ালা রমজান মাসের রোজা ফরজ করেছেন। নিঃস্ব ও অভাবীর অভাব মোচনে জাকাত ফরজ ও সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। দান-সদকা ও অন্যের জন্য খরচে উদ্বুদ্ধ করে অনেক আয়াত নাজিল করেছেন। আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ (সুরা হাদিদ : ১১)। অন্য এক প্রসিদ্ধ হাদিস! যেখানে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সমস্যাগুলোর একটি সমাধান করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি সমাধান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্যতা দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষও গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’ (মুসলিম)।

আর তাই আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গার ফসলাদি, ঘরবাড়ি ও শহর বর্ষার (বিশেষ সিলেটের বিভিন্ন গ্রাম ও শহর) পানিতে এখন প্লাবিত, সমাজের কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ সবাই এখন কঠিন সময় পার করছে। তাই দেশের, সমাজের এই সব দরিদ্র ও অসহায় মানুষের কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়, সেজন্য খাবার-দাবার, কাপড় সরবরাহ করাসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে একটু সাহায্য করাও একটি পরোপকার, যা শুধু সরকার নয় সমাজের বিত্তবান শ্রেণি ও সাধারণ মানুষের জন্যেও অংশগ্রহণ করা জরুরি। কেননা, আমাদের সমাজের বিত্তবান শ্রেণি একে-অপরে চাইলেই এসব অসহায় মানুষের বড় উপকার করা সম্ভব। যে সহযোগিতার মাধ্যমে এই সমাজ ও ফুটপাতে বসবাসরত গরিব মানুষগুলোর মুখে একটু হাসি ফুটানো যেতে পারে। একজন গরিব অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর থেকে আনন্দের আর কি হতে পারে! তাই এসব গরিব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা হবে সবচেয়ে বড় সাহায্য ও পরোপকার।

অতএব, আমাদের সমাজ, দেশ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পরোপকার। তাই নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ফরজ বিধানগুলো আদায়ের পাশাপাশি সমাজ, দেশ ও গরিব অসহায় মানুষের কল্যাণে অর্থাৎ অন্য মুমিন মুসলমানের কল্যাণে বা পরোপকারে কাজ করা আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও ঈমানি দায়িত্ব। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে পারস্পরিক কল্যাণে, সাহায্যে বা পরোপকারে কাজ করে দুনিয়ায় রহমত ও পরকালে সুনিশ্চিত জান্নাত লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী আইন ও গবেষণা বিভাগ

ইফতা (দ্বিতীয় বর্ষ), দারুস-সুন্নাহ মাদরাসা, টাঙ্গাইল

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close