reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৫ মে, ২০২২

বাস্তুচ্যুত মানুষরা দাঁড়াবে কোথায়!

চারপাশে কান পাতলেই শুনতে পাই কোরাসসংগীত। মানবতার পক্ষে যেন টানটান দাঁড়িয়ে আছে রাজনীতি। পরাশক্তি থেকে শুরু করে কে নেই মানবতার পক্ষে! তবে বাস্তবতা বলছে, মানবতার পক্ষে কোরাস গাওয়ার অর্থই হচ্ছে অমানবিকতার পথকে প্রশস্ত করা। তাদের মতে, অমানবিকতা না থাকলে মানবতার পক্ষে দাঁড়ানোর লোকই খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানবতার অপমৃত্যু হবে। এই অপমৃত্যু রোধের কথা চিন্তা করেই আমাদের এত আয়োজন। রাত না থাকলে দিনের যেমন কোনো মর্যাদা থাকে না, একইভাবে অমানবিকতা না থাকলে মানবতার অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়ে। আর সে কারণেই অমানবিকতার প্রতি তাদের দৃষ্টি এবং অপরিমার্জিত লালন।

যুক্তি অকাট্য, অস্বীকার করার কোনো উপায়ও নেই। তবে, অমানবিক হওয়া যায় শুধু অন্যের বেলায়। নিজের বেলায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে তা কখনো ঘটেনি। একটি উপমাও দেখানো সম্ভব নয়। তাই বলতে হয়, দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চিরায়ত। দুর্বলরা সব সময়ই বিচ্ছিন্ন। তারা জানে না যে একজোট হলে তাদের শক্তি কত এবং শক্তিধরদের চেয়ে তা কতটা পরাক্রমশালী।

পৃথিবীর সবাই আবার অত্যাচারের পক্ষে নন। অত্যাচারের বিপক্ষে দাঁড়ানোর সংখ্যাই বেশি এবং মাঝেমধ্যে তার নমুনা ইতিহাসের পাতা উল্টালেই পাওয়া যাবে। এভাবেই পৃথিবীর পথচলা।

সংঘাত, সহিংসতা, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে বিশ্বজুড়ে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তথ্যটি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর)। কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, যুদ্ধই মানুষকে ভিটেছাড়া করেছে। পৃথিবীর মানচিত্রের দিকে তাকালে এর নগদ প্রমাণ মিলতে পারে। বর্তমান সময়ে ইউক্রেনই তার উৎকৃষ্ট উপমা।

নিঃসন্দেহে বাংলার একটি প্রবাদের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রবচনে বলা হয়, শিল-পাটায় ঘষাঘষি, প্রাণনাশ মরিচের। এখানেও তাই, যুদ্ধ হয় দুপক্ষের, প্রাণ যায় সাধারণের। যুদ্ধে কেউ না জিতলেও হার হয় সাধারণের এবং মানবিকতার। ইউক্রেনযুদ্ধের দিকে তাকালে সেই সত্যই বেরিয়ে আসে। এখানে যারা বা যে পক্ষ থেকেই মানবিকতার স্লোগান তোলা হচ্ছে, কেউই মানবিকতার পক্ষের লোক নন। তবু তাদের ঠোঁট থেকেই বেরিয়ে আসে, ‘মানবিক হও, মানবিকতার পক্ষে দাঁড়াও’।

বিষয়টি আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর এই প্রবঞ্চনার ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী, সভ্যতা ও মানবতা। বাস্তুচ্যুত মানুষের কথা বলতে গেলে আমরা নিজ দেশের কথাও বলতে পারি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে তেমন কোনো সবল দেশ নয়; কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমাদের ওপর চেপে বসে আছে ১১ লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। তারা মিয়ানমার সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠনের ফলাফল হিসেবে বাঁচার তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের পরিভাষায় এরাও বাস্তুচ্যুত। দীর্ঘ সময় পরও তাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। পরাশক্তিধর দেশগুলো করুণা বিতরণে অভ্যস্ত। এ কাজ তারা করেও থাকেন। কিন্তু প্রকৃত সমস্যার কোনো সমাধান নেই। তাদের তত্ত্ব অনুসারে মানবিকতার অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে অমানবিকতাকেও লালন করতে হয়। আর সে কারণেই তাদের প্রায়ই অমানবিক হতে হয়।

আমরা মনে করি, শক্তির কোনো বিকল্প নেই। আর সেই শক্তি অর্জনই আমাদের পৌঁছে দিতে পারে মানবিকতার বন্দরে। তখন বাস্তুচ্যুতদের দাঁড়ানোর জন্য নতুন পথের সন্ধান আমরাই খুঁজে নিতে সক্ষম হব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close