reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২২ মে, ২০২২

বন্যার্তদের প্রশ্নে আরো মানবিক হতে হবে

এ যেন শ্বশুরবাড়িতে জামাই আসার মতো। আদরের জামাই বলে কথা। ফি বছর একবার আসতে হয়। বন্যার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটাও যেন অনেকটা সে রকম। জামাইয়ের জন্য তো কমবেশি আদর-আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকে। বন্যার প্রশ্নে সে সুযোগ থাকে না। স্বভাবগত কারণে জামাই নম্র, বন্যা তার বিপরীত। ভয়ংকর উগ্র। উগ্রতা সামলাতেই মানুষের ত্রাহী অবস্থা। আপ্যায়নের সুযোগ কোথায়। এখন সেই উগ্রতা সামলাতেই ব্যস্ত। মৌসুমি ঋতুতে দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূ-ভাগ বন্যা প্লাবিত হয়। তবে, এবার আগাম বন্যা দেখা দিয়েছে সিলেট জেলায়। ভারত থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যার রুদ্ররূপ থামানোর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছে।

তথ্য মতে, সপ্তাহের অধিককাল সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেশির ভাগ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুরমা-কুশিয়ারার বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে জনপদ। তলিয়ে গেছে মাঠভরা পাকা ধান। খাবার পানি ও পশুখাদ্যের সংকটও দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকার যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বন্যার কারণে কর্মহীন হয়ে পথে বসেছে খেটে খাওয়া মানুষের দল। নগরবাসীও ভোগান্তির বাইরে নেই। তথ্য মতে, ৬টি উপজেলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নগরের বেশির ভাগ এলাকাও হয়েছে প্লাবিত। বন্যার কারণ নির্ণয় করতে গিয়ে বলা হয়েছে, সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত সাত দিনে ১২৩৮ মিলি লিটারের অধিক বৃষ্টিপাত এ বন্যাকে ত্বরান্বিত করেছে।

বৃষ্টি এখনো থামেনি। নদীর পানি বাড়ার প্রক্রিয়াও পড়ে যায়নি। পানির তোড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এরই মধ্যে ভেঙে গেছে ২০টি নদীরক্ষা বাঁধ। নগরের অন্তত ৬০ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাসাবাড়ি, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি অফিসেও পানি উঠেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ। পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকেই যাচ্ছে। বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। দিন পরিক্রমা শেষে প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের তথ্য মতে, মানুষের আশ্রয় ও নিরাপত্তার জন্য খোলা হয়েছে ৩২৬টি আশ্রয়ণকেন্দ্র। গবাদি পশুর জন্য তৈরি হয়েছে ২৩৮টি সংরক্ষণ কেন্দ্র। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে ২৩৪ টন চাল, ৩ হাজার ৯৯ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ১৩ লাখ টাকা। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওষুধ, খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে।

বাস্তবতা বলছে, ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সাহায্য সমান্তরালে নেই। আরো বেশি সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে। বন্যায় জেলার ১ হাজার ৪২১ হেক্টর আউশ ধানের বীজতলা এবং বোরো ফসলের ১৭০৪ হেক্টর ও গ্রীষ্ণকালীন সবজির ১ হাজার ৩৩৪ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

এ ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য আলাদা পরিকল্পনা করা খুবই দরকার। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই সর্বস্ব হারানো এসব মানুষের সামনে শঙ্কা ও হতাশা ছাড়া আর কিছুই থাকবে না। এই শঙ্কা ও হতাশা দূর করার জন্য আগাম পৃথক পরিকল্পনা গ্রহণ আজ সময়ের দাবি। আমরা মনে করি, বিষয়টি সরকার বিশেষ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই বিবেচনা করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close