জিল্লুয়ারা বেগম
মুক্তমত
সৃজনশীল প্রশ্নের সহজ কাঠামো
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। প্রতি বছর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল প্রশ্নের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচিত হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত সৃজনশীল প্রশ্ন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করতে না পারে এবং যথার্থ নিয়ম অনুযায়ী উত্তর লিখতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সমস্যা বোধ করে। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সঞ্চার হয়। শিক্ষার্থীদের এ ভীতি দূর করার জন্য একজন শিক্ষককে যে কাজটি করতে হবে তা হলো সঠিকভাবে তথ্য উপস্থাপন করে, উদাহরণের মাধ্যমে সৃজনশীল পদ্ধতি বিষয়টাকে সহজ করে দেওয়া। এতে বিষয়টি সহজে বোধগম্য হয়। এ লক্ষ্যে একটি সৃজনশীল প্রশ্নের গঠন কাঠামো আলোচনা করা যায়।
একটি সৃজনশীল প্রশ্নের শুরুতে একটি নতুন পরিস্থিতিযুক্ত উদ্দীপক এবং উদ্দীপক-সংশ্লিষ্ট চারটি প্রশ্ন থাকে। প্রশ্ন চারটি কাঠিন্যের ক্রমানুসারে পর্যায়ক্রমে থাকে। একটি সৃজনশীল প্রশ্ন চিন্তন দক্ষতার স্তর যাচাই করতে পারে। প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
সৃজনশীল প্রশ্নের প্রথম অংশটি হলো (ক) জ্ঞান স্তরের যা সহজ ও নিতান্তই স্মৃতিনির্ভর। প্রশ্নটি স্মৃতিনির্ভর হলেও তা যেন অর্থবহ এবং শিক্ষণীয় হয়। এ অংশটির জন্য বরাদ্দ থাকে ১ নম্বর।
সৃজনশীল প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশটি হলো (খ) অনুধাবন স্তরের। এর মাধ্যমে শিক্ষাক্রমের আওতায় পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু অনুধাবন করার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন ঘটনা বা বিষয়বস্তুর বিবরণ দেওয়া থাকে। এ ধরনের প্রশ্নে সরাসরি পাঠ্যবইয়ের অনুরূপ বিবরণ জানতে চাওয়া হয় না। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ব্যাখ্যা বা বর্ণনা দিতে বলা হয়। প্রশ্নের এ অংশের জন্য ২ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
প্রশ্নের তৃতীয় অংশটি হলো (গ) প্রয়োগ স্তরের প্রশ্ন। সৃজনশীল প্রশ্নের এ অংশটি ভালো মানের নতুন পরিস্থিতিযুক্ত উদ্দীপকের ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ উদ্দীপক যদি খুব মানসম্পন্ন হয় তবে প্রয়োগ দক্ষতার প্রশ্নটি করা সম্ভব। এ প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠ্যপুস্তক থাকে। পাঠ্যপুস্তকের তথ্য এবং এর অনুধাবন উদ্দীপকে বর্ণিত নতুন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী প্রয়োগ করবে। প্রশ্নের এ অংশের জন্য ৩ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
সৃজনশীল প্রশ্নের চতুর্থ অংশ (ঘ) হচ্ছে উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্ন। এ স্তরের প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর বিচার-বিবেচনা করার দক্ষতা, বিশ্লেষণ করার দক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা ইত্যাদি যাচাই করা হয়। এ প্রশ্নের উত্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠ্যপুস্তকে দেওয়া থাকে এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য নতুন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করে শিক্ষার্থী তার বিচার-বিশ্লেষণের, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও মূল্যায়নের দক্ষতা প্রকাশের সুযোগ পাবে। এ অংশের জন্য ৪ নম্বর বরাদ্দ থাকে।
একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝানো যেতে পারে। একটি গাড়ি বা গাড়ির চিত্রকে যদি উদ্দীপক হিসেবে ধরা হয়, তবে চিন্তন দক্ষতার চারটি স্তর অর্থাৎ জ্ঞান, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো হতে পারে-
১. জ্ঞান- গাড়ি কী? বা উদ্দীপকের চিত্রটি কিসের ছবি? ২. অনুধাবন- গাড়ি ব্যবহারের দুটি সুবিধা লিখ। ৩. প্রয়োগ- কীভাবে গাড়ি চালাতে হয় তা বর্ণনা করো? (এক্ষেত্রে গাড়ি চালানোর পূর্ব জ্ঞান নতুন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে হবে)। ৪. উচ্চতর দক্ষতা- গাড়ি চালানোর গতিবিধি ও নিয়মকানুন ব্যাখ্যা করো। (এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় গাড়ির গতি, সময়, ট্রাফিক নিয়মণ্ডকানুন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষার্থী নিজের চিন্তন ক্ষমতা অর্থাৎ বিচার-বিশ্লেষণ দক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা যাচাই করা হয়)।
উদ্দীপক মানে একটি নতুন পরিস্থিতি। উদ্দীপকে চিন্তন দক্ষতার বিভিন্ন স্তর প্রতিফলিত হয়। এটি পাঠ্যপুস্তকে সরাসরি থাকবে না বরং পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তর সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলে অধিকতর গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক
পটুয়াখালী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়
"