মাহমুদুল হাসান মিল্টন

  ২১ মে, ২০২২

মুক্তমত

ঢাকাকেন্দ্রিক ব্যবস্থাপনার জটিলতা

সম্প্রতি একটি খবর সারা দেশে বেশ আলোচনা তুলেছে। তা হলো রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফুটওয়্যার কোম্পানি গড়ে উঠেছে যার মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই উদ্যোগে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক তৎপরতা যেমন বৃদ্ধি করেছে তেমনি ইউরোপ আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে জুতা রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে লাভবান হচ্ছে দেশ। বাংলাদেশের যদি দুটি বড় শহরের কথা বলি প্রথমেই আসে রাজধানী ঢাকা। এই ঢাকা শহরের মানুষ বসবাস করে দুই কোটির বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, প্রতি বছর ঢাকায় বসবাসের জন্য ৬ লাখ ১২ হাজার মানুষ যুক্ত হচ্ছে, যা দিনপ্রতি ৭০০ মানুষ। প্রকৃতপক্ষে ঢাকা শহরের মোট ভোটার দুই সিটি করপোরেশনের ১৫টি আসন মিলে ৫৫ লাখের আশপাশে। তাহলে দেখা যাচ্ছে দুই কোটির মধ্যে বাকি দেড় কোটি মানুষ দেশের আনাচে-কানাচে থেকে ছুটে এসেছে ঢাকা শহরে। কারণ একটাই কর্মসংস্থান আছে শুধু ঢাকা শহরে। ঠিক এই একটি কারণেই এই শহরের জনসংখ্যা এত বেশি। এই ঘনবসতির কারণে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৬ হাজার জনের আশপাশে মানুষ বসবাস করে যা অনেক বড় একটি সংখ্যা। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে সৃষ্টি হচ্ছে নানাবিধ সমস্যা। যেমন- যানজট, জলাবদ্ধতা, বায়ুদূষণ, পানিদূষণসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। বায়ুদূষণের মাত্রা এমন পর্যায়ে গেছে যা বসবাসযোগ্য শহরগুলোর মধ্যে একদম তলানিতে।

অন্যদিকে যানজটের কারণে শুধু ঢাকায় দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যার আর্থিক ক্ষতি বছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আমাদের মতো দেশের উন্নতির ক্ষেত্রে যা বড় অন্তরায়। আমরা আর এখন চাইলেই সবটুকু সমস্যা একেবারে নির্মূল করতে পারব না। তবে কিছু পদক্ষেপে অনেক সমস্যার সমাধান অনেকাংশে নির্মূল হতে পারে। এই ঢাকা শহরের সক্ষমতা আসলে কতটুকু এই প্রশ্ন যদি একজন নগরবীদকে করা হয় তাহলে তিনি হয়তো উত্তর দেবেন ৩০ লাখ বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ। এর বেশি ধারণের ফলে জীববৈচিত্র্য যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি নাগরিক সুবিধাও পূরণ হচ্ছে না। এরই মধ্যে ঢাকা শহরে বায়ুদূষণ বলুন আর পানিদূষণই বলুন, দূষণের মধ্যে এক নম্বরে চলে এসেছে। পানির স্তর নেমে গেছে কয়েকগুণ।

এক জরীপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের পানির স্তর নেমে গেছে ন্যূনতম ৭০০ ফুটে। অর্থাৎ এর চেয়ে কমে ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া সম্ভব নয়। যা অন্যান্য বিভাগীয় শহরের তুলনায় অন্তত ৭০ গুণ। এই চিত্র জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই অবস্থা বিরাজ করতে থাকলে কয়েক বছর পরই হয়তো এই শহরে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা বড় ভুল হবে দেশের জন্য। এখনই সময় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা।

বাসস্থানকে কেন্দ্র করে যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া যায় তাহলে তা হবে এক অনন্য দৃষ্টান্ত যা রংপুরের ওই জুতার কোম্পানি করে দেখিয়ে। নগর পরিকল্পনাবীদরা বলে থাকেন ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণ এভাবেই আনতে হবে। ঢাকার বাইরের শহরগুলোকে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে এনে সমানভাবে অর্থনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা গেলে নানাবিধ সমস্যা স্থায়ীভাবে মিটে যাবে যার অন্যতম হচ্ছে যানজট এবং সব ধরনের দূষণ। একটি শহরের সক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত কিছুই বহন করা হবে মানবজাতির জন্য বড় ক্ষতির লক্ষণ। পাশাপাশি পরিবেশ বিপর্যয় তো রয়েছেই। বড় বড় অফিস আদালত শুধু ঢাকাতে না করে পরিকল্পিতভাবে বাকি ৬৩ জেলাতে স্থাপন করা গেলে তা হবে ঢাকাকে বাঁচানোর প্রথম উদ্যোগ। এতে করে এই অফিসগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং তাদের পরিবার ভাগ হয়ে যাবে ওইসব জেলাতে। এক শহর কেন্দ্রিক উন্নতির মনোনিবেশ কমাতে হবে। সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে সব গ্রাম, উপজেলা এবং জেলাশহরে। তবেই বাঁচবে ঢাকা।

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close