reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ মে, ২০২২

সুস্থ জাতি গঠনের অন্তরায় শব্দদূষণ

আমরা সবাই শব্দদূষণের সঙ্গে পরিচিত। এই দূষণ মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু দিন দিন এই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার পরিবর্তে চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়েই চলেছে। যত দিন যাচ্ছে, পরিবহন বৃদ্ধির কারণে শব্দদূষণের মাত্রাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। এ ব্যাপারে সবাই যেন চরম উদাসীন।

উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের মানসিক অবস্থা বদলে দেয়। দীর্ঘ সময় এরমধ্যে থাকলে মানুষের মেজাজের পরিবর্তন ঘটে, যাকে বলা হয় মুড ডিজঅর্ডার। এর ফলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়ে, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। আর বিশেষ করে শিশুদের শব্দের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। উদ্বেগ, মানসিক চাপ বাড়ার ফলে তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ ছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে শিশুর ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গর্ভের শিশুর ব্যক্তিত্বের গড়ন, আচরণ ও চিন্তায় প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষের সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম দরকার। কিন্তু সারাক্ষণ উচ্চমাত্রার শব্দের মধ্যে থাকার ফলে তাকে নির্ঘুম কাটাতে হয়।

শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম; রাজধানী ঢাকায় এই দূষণের মাত্রা অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে বেশি আর রাজশাহী রয়েছে চতুর্থ অবস্থানে। ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২ : নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন বলছে, ঢাকায় শব্দের সর্বোচ্চ তীব্রতা ১১৯ ডেসিবল, যা এ প্রতিবেদনে আসা শহরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৯ সালের গাইডলাইন অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার জন্য শব্দের গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৫৫ ডেসিবল, বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল। ২০১৮ সালের সর্বশেষ হালনাগাদ গাইডলাইনে সড়কে শব্দের তীব্রতা ৫৩ ডেসিবলের মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়। এ হিসাবে ঢাকার বাসিন্দাদের পথ চলতে গিয়ে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া সীমার দ্বিগুণ মাত্রার শব্দের অত্যাচার সহ্য করতে হয়।

সুইস সংস্থা আইকিউ এয়ার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে বিশ্বের কোনো দেশই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রত্যাশিত বায়ুমান বজায় রাখতে পারেনি, আর দূষণের মাত্রার বিচারে সবার ওপরে রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

শব্দদূষণের কারণে ইউরোপে প্রতি বছর ১২ হাজার মানুষের অকালমৃত্যু হয়, রক্ত সঞ্চালনে ব্যাঘাতজনিত হৃদরোগীদের তালিকায় ৪৮ হাজার নতুন রোগী যুক্ত হয়। এ ছাড়া শব্দের কারণে ইউরোপের ২ কোটির বেশির মানুষ বিরক্তিতে ভোগে।

শব্দদূষণের ফলে নানা মাত্রার শ্রবণবধিরতা দেখা দেয়। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা যেহেতু উচ্চমাত্রার দূষণের মধ্যে থাকেন, তাই তাদের নানা মাত্রার শ্রবণবধিরতা থাকার সম্ভাবনা আছে। সড়কে নিয়মিতভাবে চলাচলকারী চালকদের মধ্যেও এমন বধিরতা থাকলে তা থেকে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই শব্দদূষণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কোনো ধরনের অবজ্ঞা এবং অবহেলা জাতি ও রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। যে হুমকি একটি জাতিকে না বধির বানানোয় বিন্দুমাত্রও কার্পণ্য করবে না। সুতরাং; সাধু... সাবধান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close