reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৮ মে, ২০২২

নদী ভাঙছে গ্রাম ভাঙছে ভাঙছে বামনহাজরা

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এখন কী বলা যায়! অনেকে হয়তো বলবেন, দেশে নদণ্ডনদীর যে বেহাল অবস্থা তাকে আর নদীমাতৃক বলে অপমানিত করতে চাই না। তবু বলব, মা যতই রুগ্ণ আর দুর্বল হোক তাকে তো আর ত্যাগ করা যায় না। আমরা নদীমাতৃক বাংলাদেশেরই সন্তান। যেটুকু নদী এখনো জীবিত আছে তার সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে আমরা আবার ফিরে পেতে পারি আমাদের মায়ের সেই হারানো গৌরব। তবে তার জন্য প্রয়োজন হবে সন্তানদের আন্তরিকতা, মায়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। বর্তমান সমাজ এবং সমাজব্যবস্থায় যার ঘাটতিই এতটাই বেশি যে, স্বপ্ন দেখতেও ভয় লাগে।

নদীর অবস্থা রুগ্ণ হলেও তেজ এখনো কমেনি। প্রতি বছরই ভাঙনের গান শোনা যায়। আগেও ছিল, এখনো আছে। বাঙালি জীবনে নদীভাঙন যেন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই ভাঙনকে সঙ্গে নিয়েই বেঁচে আছেন আমাদের নদীপাড়ের মানুষ। প্রতি বছরই হাজার হাজার বিঘা পাড়ভূমিকে আশ্রয় নিতে হচ্ছে নদীতে। সম্প্রতি এমনই এক নদীতে বিলীন হতে চলেছে বামনহাজরা গ্রাম। গত এক সপ্তাহে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙালী নদীর বামতীরবর্তী গ্রাম বামনহাজরার মানচিত্র বদলে যাচ্ছে। প্রতিক্ষণেই নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, ভিটেমাটিসহ মানুষের সহায়-সম্বল। এমনকি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল কবরস্থানও রেহাই পাচ্ছে না এই অকাল ভাঙনের আগ্রাসী মনোভাব থেকে। দিশাহারা গ্রামবাসী এজন্য বালুদস্যুদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।

আগেই বলেছি, সন্তানরা যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মায়ের প্রতি আন্তরিক না থাকে তখন অসময়ে এমন দুর্যোগ নেমে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। স্থানীয়রা আঙুল তুলেছেন বালুদস্যুদের দিকে। কিন্তু এ বালুদস্যুরা এত সাহস এবং শক্তি পায় কোথা থেকে? বিষয়টি কমবেশি সবারই জানা। তবে আওয়াজ তোলার কেউ নেই। কেননা বালুদস্যুদের হাত অনেক লম্বা। সমাজের সমাজপতিরা সব সময়ই তাদের পেছনে থেকে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। পৃথিবীতে স্বার্থ ছাড়া কেউই এক পাও সামনে বাড়ান না। এ বন্ধন বড় কঠিন বন্ধন। তাদের সহজে হটানোও সম্ভব নয়। তাই দুর্ভোগ ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষকেই পোহাতে হয়। তারা ভিটেমাটি হারিয়ে নিজভূমে উদ্বাস্তুর তালিকায় নাম লেখান। প্রতি বছর এ রকম উদ্বাস্তুর সংখ্যা কয়েক হাজার পরিবার।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার উত্তরে দেওয়ানতলা রেলসেতুর পূর্বপাশের এই গ্রাম কখনো নদীভাঙনের মুখে পড়েনি। ওই রেলসেতুটিই ছিল তাদের গ্রামের রক্ষাবাঁধ। কিন্তু কয়েক বছর আগে রেলসেতুর কিছুটা উজানে দেওয়ানতলা সড়ক সেতু নির্মাণ করা হয়। সেখান থেকেই ভাঙনের সূত্রপাত। এরপর আসে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে অবৈধ বালু উত্তোলন। ফলে ভাঙনের তীব্রতা তীব্রতর হয়। বাংলাদেশের মানুষ তীব্রতাকে মোকাবিলা করেই বেঁচে ছিল এবং এখনো তা অব্যাহত রেখেছে। তবে তীব্রতর হলে তা তাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।

আমরা মনে করি, তীব্রতর হওয়ার আগেই ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই সে পথে পা বাড়াবে বলেই আমাদের বিশ্বাস। আমরা আইনের শাসনের ওপর আস্থা রাখতে চাই। যেকোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের অবসান হবে- এটাই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close