reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ মে, ২০২২

এরা শিক্ষক নন অবক্ষয়ের সন্তান

বাসন্তীকে কী দোষ দেব, বাসন্তী তো যুবতী মেয়ে। আসলেও তাই। যুবতী হলেই প্রকৃতিগত কারণে তার ভেতরে ও বাইরে কিছু পরিবর্তন আসে এবং এটাই স্বাভাবিক। একে অস্বীকার করারও কোনো পথ নেই। একইভাবে কোনো সমাজের অবক্ষয় বৃত্তে থাকা জনৈক শিক্ষকেরও কোনো দোষ নেই। সে তো এ অবক্ষয়েরই সন্তান। অবক্ষয়ে জন্ম, অবক্ষয়ে বেড়ে ওঠা, তাই- চিন্তা ও চেতনায় যে অবক্ষয়ের ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে- সেটাই স্বাভাবিক। এই স্বাভাবিকতাকে অস্বীকার করারও কোনো উপায় নেই। তবে এ দুটির একটি প্রাকৃতিক এবং অপরটি মানবসৃষ্ট। এটুকুই পার্থক্য। ইচ্ছে করলে মানবসৃষ্টটি সমাজ থেকে তুলে ফেলা সম্ভব। অপরটি কখনোই সম্ভব নয়।

অবক্ষয়ের বৃত্তে অনৈতিকতার বসবাসই নিরাপত্তার বলয়ে হৃদ্ধ এবং এটিও স্বাভাবিক। সুতরাং, সমাজে অবক্ষয় যত দিন দীর্ঘায়িত হবে, অনৈতিকতা তত বেশি সম্প্রসারিত হবে। সম্প্রতি জনৈক শিক্ষক কোচিং না করায় শিক্ষার্থীকে রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেছেন। শিক্ষার্থীর অপরাধ তিনি শিক্ষকের কাছে কোচিং করতে চাননি। নির্যাতনের শিকার মো. সোলাইমান (২০) ইনস্টিটিউটের ল্যাব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

পটুয়াখালীর দাসপাড়ার সোলাইমান গত শুক্রবার প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে ওঠেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে হোস্টেলের ৪০৭ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। সাক্ষী প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু শিক্ষার্থী। কালীগঞ্জ থানার ওসি ওই শিক্ষার্থীকে ব্যাপকভাবে মারধরের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, শিক্ষার্থীর শরীরের নানা স্থানে ক্ষতের নমুনা পাওয়া গেছে।

অভিযোগ গেস্ট টিচার সাঈদী হাসানের বিরুদ্ধে। ইনস্টিউটের কয়েক শিক্ষার্থী অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, কোভিড মহামারি শুরুর আগের বছর প্রতিষ্ঠানে গেস্ট টিচার হিসেবে যোগ দেন এই অনৈতিক শিক্ষক মানব। পরীক্ষার খাতায় লিখতে না দেওয়া, ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়াসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করাই ছিল তার একটি লাভজনক অনৈতিক প্রকল্প। এমনকি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলনের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থী মো. সোলাইমান তার কাছে কোচিং করতে না চাওয়ায় তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

এদিকে ইনস্টিউটের অধ্যক্ষ মো. ফারুকুজ্জামান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখানেই প্রশ্ন! কে ব্যবস্থা নেবে!! শিক্ষক সাঈদী হাসান যে অপরাধ করেছেন তা নিঃসন্দেহে একটি ফৌজদারি অপরাধ। এ ধরনের অপরাধের তদন্ত করার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের নয়। অধ্যক্ষ যখন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন, তখন তার প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব ছিল থানায় একটি জিডি বা মামলা করা। থানাই এর তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে এগিয়ে আসত। প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে নজরদারির ভূমিকা পালন করতে পারত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার কিছুই করা হয়নি।

সম্ভবত শিক্ষক সাঈদীর ক্ষমতার দাপটের সামনে পুরো প্রতিষ্ঠান মাথা তুলে দাঁড়ানোর সাহস করে না। সামাজিক অবক্ষয়ের বৃত্তে সবকিছুই ধামাচাপা পড়ে যায়। তাই মামলা করার সাহসও থাকে না কোনো পক্ষের। সময়ের বিবর্তনে একটা সমঝোতা হবে। সবকিছুই ধামাচাপা পড়বে অবক্ষয়ের বিশাল গহ্বরে। আর পুরো সমাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোনো কাজ খুঁজে পাবে না। শিক্ষকের কী দোষ বলুন, তিনি তো অবক্ষয়ের সন্তান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close