reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ মে, ২০২২

কী অদ্ভুত এই দেশ সেলুকাস!

বিশ্ববিজয়ী বীর আলেকজান্ডার এ দেশে এসে কোন চিন্তা থেকে বলেছিলন, ‘কী অদ্ভুত এই দেশ সেলুকাস’! ব্যাখ্যা আমরা অনেক শুনেছি। কোনো ব্যাখ্যাই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে কেউ কেউ বলেছেন, তিনি এ দেশের মানুষের চরিত্রের সন্ধান পেয়েছিলেন। কচুপাতার ওপর টলটলায়মান পানির অবস্থার সঙ্গে এ দেশের মানুষের চরিত্রের সাদৃশ খুঁজে পেয়ে তার এই মন্তব্য। তবে তার এই ভাবনার সত্যতা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। আমাদের চরিত্র যেন প্রকৃতির ষড়ঋতুর মতো। তবে ঋতু পরিবর্তনের মাঝে নান্দিকতা থাকলেও আমাদের চরিত্র পরিবর্তনের মাঝে তার লেশ মাত্র নেই। আর সে কারণেই বিশ্বের মাঝে দুর্নীতির তালিকায় আমরাই শীর্ষে।

সামান্য তরমুজের কথাই ধরা যাক। পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, খুলনায় পানির দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। চাষিদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। বেপারিদের দেখা নেই। এ বছর বাম্পার ফলন হওয়ার পর বিক্রি করতে না পারায় তাদের স্বপ্নের বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ভাসছে কষ্টের রক্তাক্ত জীবন। গত বছর জেলায় ৭ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। লাভজনক হওয়ায় এবার তা বেড়ে ১৩ হাজার ৯৭০ হেক্টরে উন্নীত হয়েছে। উৎপাদন প্রায় সোয়া চার লাখ টন। এদিকে চাহিদা ও দাম না থাকায় মাঠেই পচে যাচ্ছে রসাল এই ফল। ৪০ ভাগ জমির তরমুজ এখনো মাঠেই অপেক্ষা করছে।

চাষ করা যেন কৃষকদের জন্য শাখের করাত। যা আসতেও কাটে, যেতেও কাটে। উৎপাদন করলেও অশনিসংকেত, না করলেও তাই। ভালো ফসল হলে কোনো স্বীকৃতি নেই, খারাপ করলে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। বিক্রি করতে গিয়ে কোনো সময়ই তারা ভালো দাম পান না। মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা লাভের বড় অংশ নিয়ে যান। সংরক্ষণের কোনো সুব্যবস্থাও নেই। তাই লোকসানের দায় সবটাই কৃষকের। স্থানীয় কৃষকরা আক্ষেপ করে বলেছেন, রোজার মধ্যে কিছুটা দাম পাওয়া গেছে। মাঠেই সব তরমুজ পচে যাচ্ছে। যা বিক্রি হচ্ছে, তা পানির দামে। তবে বেশ কয়েক দিন বাজারে তরমুজ নিয়ে তেলেসমাতিতে মেতেছিল দেশ। নেতৃত্ব দিয়েছে বিক্রেতাপক্ষ ও মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। অনেকটা সোনার দামে চালানোর চেষ্টা করেছেন খোলাবাজার। বিক্রি যে হয়নি, তাও নয়। তবে ক্রেতাণ্ডবিক্রেতার মাঝে বচসাও কম হয়নি।

বর্তমান সময়ে ৫-১০ কেজি ওজনের একটি তরমুজ খেত থেকে ১০-২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমরা রমজানেই দেখেছি ঢাকা শহরের খোলা বাজারে সেই তরমুজ কেজি দরে বিক্রি হতে। তখনো লাখের এক ক্ষুদ্রতম অংশ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে কৃষককে। আর এখন প্রায় শূন্য হাতেই বসে থাকতে হচ্ছে তাদের। আর এর নামই হচ্ছে বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা। যে ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল বললেও কম বলা হবে। যেটুকু আছে তাকে অনৈতিক আখ্যায়িত করলেও বেশি করা হবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কারো যেন মাথাব্যথা নেই। থাকলেই বিপদ! অনৈতিক বাণিজ্যের হাত থেকে ক্রেতাপক্ষ নিস্তার পেতে পারে। মধ্যস্বত্বভোগী এবং ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমতে পারে। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পেয়ে উৎপাদনকে আরো শক্তিশালী করতে পারে। কিন্তু সেটা তো হওয়ার নয়। কচুপাতার ওপর পড়ে থাকা পানির চরিত্রের মতো আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত হয়তো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন হলে রাজনীতির চরিত্রেও পরিবর্তন আসবে। তখন কেউ এসে আর বলতে পারবে না, ‘কী অদ্ভুত এই দেশ সেলুকাস’!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close